বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ এবং তার ব্যবহার বেড়েই চলেছে। এমন এমন সব প্রযুক্তি আবিষ্কার হচ্ছে, যা কবি-সাহিত্যিকরা পর্যন্ত কখনো কল্পনা করেন নি। যেমন: আদিকাল থেকে যান্ত্রিক যানবাহন থেকে দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে। যা থেকে বায়ু দূষণ ঘটছে এবং বায়ুমণ্ডলের উঞ্চতা বেড়ে জলবায়ু পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু সম্প্রতি নেদারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা এমন একটি গাড়ী তৈরি করেছেন, যা বায়ু শোষণ করে। তাই এটি দূষণ খেকো গাড়ী বলে খ্যাত হয়েছে। প্লাস্টিকের দূষণ ছড়ছে জলে, স্থলে ও মহাকাশে। এত সর্বত্রই বিপর্যয় ঘটছে। তাই নন রিসাইক্লিং প্লাস্টিক বন্ধ করার জন্য বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন চলছে। তৎপ্রেক্ষিতে অনেক দেশে একবার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভারতেও এটা করা হয়েছে। বাংলাদেশেও তা করার জন্য পরিবেশবিদরা দাবী করছেন। কিন্তু প্লাস্টিককে গলিয়ে ধ্বংস করার বিষয় আবিষ্কার করেছেন স্পেনের বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, মোমের কীটের লালায় দুই ধরনের রাসায়নিক আছে, তা দিয়ে প্লাস্টিক ধ্বংস করা যাবে। প্লাস্টিক খেকো রোবট আবিষ্কার করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। কৃত্রিম হাত তৈরি করেছেন আফগানিস্তানের তরুণ বিজ্ঞানী। যা অনেকটা স্নায়ু সমৃদ্ধ হাতের মতোই কাজ করে। সড়ক কার্পেটিংয়ে বিটুমিনের সঙ্গে ৫-১০% পলিথিন মেশানো হলে পরিবেশ দূষণ কমবে, প্রতি কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিংয়ে ২.৭৫ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে এবং সড়কের স্থায়িত্ব বাড়বে দ্বিগুণ। যা উদ্ভাবন করেছেন চুয়েটের গবেষকরা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেলফোনের একটি অ্যাপের মাধ্যমে কণ্ঠ শুনেই কভিড-১৯-এর সংক্রমণ চিহ্নিত করতে পারবে। এটি স্পেনের বার্সেলোনায় ইউরোপিয়ান রেসপিরেটরি সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেসে উপস্থাপিত হয়েছে। দিনাজপুরের তরুণ বিজ্ঞানী জমিতে কীটনাশক ছিটানোর ড্রোন তৈরি করেছেন। যা রিমোটের সাহায্যে ও জিপিএসের মাধ্যমে দূর থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটি দিয়ে আবাদি জমিতে কীটনাশকসহ রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যাবে। এর আগে সে ককশীট দিয়ে তৈরি করেছেন চালক বিহীন ছোট বিমান। যা আকাশেও উড়েছে। রুগী ও ডাক্তার বহু দূরে থাকা সত্বেও ৫জির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যাচ্ছে। এমনকি নির্ভুলভাবে অপারেশন পর্যন্ত। ‘পানিবিহীন টয়লেট’ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই টয়লেটে পানির কোনো ব্যবহার নেই। মলত্যাগ করা হলে এটির সঙ্গে সংযুক্ত উচ্চমাত্রার তাপ প্রযুক্তি সেটিকে প্রথমে শুকিয়ে এবং তারপর পুড়িয়ে ছাই করে ফেলে। তরল মূত্রকে বিশুদ্ধ ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানিতেও রূপান্তরের প্রক্রিয়াও রয়েছে এই টয়লেটে। এরূপ আরো অসংখ্য নজির রয়েছে প্রযু্ক্িত খাতের।
কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও ব্যবহার যত বাড়ছে, মানুষের কর্মসংস্থান তত কমছে। আইএলও বলেছে, প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে ৮০ কোটি মানুষ কর্ম হারাবে ২০৩০ সালের মধ্যে। তবুও প্রযুক্তির আবিষ্কার ও ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। বরং বেড়েই চলেছে।কারণ,মানুষ ছাড়াই স্বল্প সময়ে ব্যাপক কর্ম নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হয় প্রযু্ক্িততে। ফলে উৎপাদনের ব্যয় অনেক কমে যায়। আধুনিক এই বিবর্তনের ধারায় যে যত যুক্ত হচ্ছে, সে তত উন্নতি করছে। তাই এতে আমাদেরও সামিল হতে হবে। কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ তথা সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। নতুবা প্রতিযোগীতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।