দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর হার বাড়লেও উদ্বেগজনক হলো-যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার, এর ছিটেফোঁটাও লক্ষ করা যাচ্ছে না। এতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরজুড়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম না চালানো, হট স্পটগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে লার্ভা ধ্বংসে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা এবং ‘র্যাপিড ক্রাশ প্রোগ্রাম’ না নেওয়ার কারণেই পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটছে। মূলত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের দুর্বলতার কারণেই এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী ও কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহে সাড়ে ৩ হাজার ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়কালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার বিষয়টি অবহিত করার পরও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার বিভাগ কেন তৎপর হলো না, এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ইতঃপূর্বে বিশেষজ্ঞরা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বছরজুড়ে কার্যক্রম পরিচালনা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। দুঃখজনক হলো, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা পরিপালন করেনি। বর্তমানে যদিও বিচ্ছিন্নভাবে কিছুকিছু কার্যক্রম চোখে পড়ছে, তবে সবকিছু কার্যকর ও সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে না পারলে পরিণতি অতীতের মতো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ যে মাত্রায় বেড়েছে, তাতে প্রয়োজন ‘র্যাপিড ক্রাশ প্রোগ্রাম’ পরিচালনা করা; হট স্পটগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো ধ্বংসে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। যেহেতু ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো প্রতিষেধক বা টিকা নেই, তাই সুরক্ষিত থাকার একমাত্র উপায় হলো মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষার ব্যবস্থা করা। এজন্য কোথাও যাতে পানি জমে থাকতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হলো-নগরীর সর্বত্র, বিশেষ করে যেসব স্থানে মশার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে; সেসব স্থানে জমে থাকা পানি অপসারণ ও মশা নিধনের কার্যকর ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা করা। খেয়াল রাখতে হবে, এডিস মশা যেন কোনোভাবেই ডিম পাড়ার সুযোগ না পায়।