ইলিশ রক্ষার অভিযানে ব্যবহৃত ট্রলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের খেয়াঘাট এলাকায়।
শুক্রবার দুপুরে ট্রলার মাঝি আনোয়ার হোসেন জানান, ইউএনও’র নির্দেশে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তার ট্রলারে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে কি কারণে ট্রলারটি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তা বলতে পারছিনা। আনোয়ারের বৃদ্ধ বাবা জানান, ভাড়ায় চালিত ট্রলারটি ছিলো তাদের পরিবারের আয়ের একমাত্র পথ। ট্রলারটি পুড়িয়ে ফেলায় পরিবারের সবাই ভেঙ্গে পরেছেন। তিন লাখ টাকা মূল্যের ট্রলারটি কিভাবে তার মালিককে বুঝিয়ে দিবেন তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযানিক দলের সাথে থাকা অন্য ট্রলার মাঝিরা জানান, আনোয়ার মাঝির ট্রলার আগে থেকেই থানা পুলিশ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতো। সেই ধারাবাহিকতায় মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে ট্রলারটি ব্যবহার করা হচ্ছিলো। সম্প্রতি অভিযানে জব্দ হওয়া মাছ ও জাল আনোয়ার মাঝির ট্রলারে ওঠালেই তার পরিমাণ কমে যেতো। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা চেয়ারম্যান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনোয়ারকে জিজ্ঞাসা করেন। এর কিছুক্ষন পরই সেখান থেকে চলে যায় আনোয়ার। পরবর্তীতে ট্রলারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে থাকা বাবুগঞ্জ থানার এসআই হান্নান মিয়া জানান, অভিযান শেষে খেয়াঘাটে আনোয়ার হোসেনসহ অভিযানিক দলের নৌযানগুলো আনা হয়। পরে জব্দ হওয়া জাল ও মাছ তীরে ওঠানো হয়। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান, মৎস্য কর্মকর্তা, থানা পুলিশের সদস্যদের উপস্থিতিতে জব্দকৃত ইলিশ বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করেন ইউএনও এবং জাল নদীর তীরে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। পরবর্তীতে ইউএনও আনোয়ারের ট্রলারটির সামনে যান এবং তার দেহরক্ষী আনসার সদস্যরা ট্রলারটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরআগে তুচ্ছ ঘটনায় ইউএনও ট্রলার মাঝি আনেয়ারের ওপর ক্ষিপ্ত হলে সে পালিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দেহরক্ষী আনসার সদস্য মামুন হাওলাদার ও সুকদেব দাস জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার যখন জব্দকৃত ইলিশ বিতরণ করছিলেন, তখন ট্রলারটির ভেতরে হঠাৎ করে আগুন জ্বলতে দেখেন। তাৎক্ষনিকভাবে তারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আগুনের ব্যপ্তি ছড়িয়ে পরলে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন।
অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যদের বরাত দিয়ে বাবুগঞ্জ থানার ওসি মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, ট্রলার মাঝি আনোয়ারকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হলে, সে ভয়ে পালিয়ে যায়। পরে ইউএনও’র সাথে থাকা আনসার সদস্যদের মাধ্যমে ডিজেল দিয়ে ট্রলারে আগুন দেয়া হয়। তবে কি কারণে ট্রলারে আগুন দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলতে পারবেন। আর ঘটনাস্থলে কোন মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথাও আমার জানা নেই। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত ফাতিমা বলেন, রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করা ট্রলারটিতে আগুন দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ ট্রলার মাঝি আনোয়ার জানিয়েছেন গ্যাসের চুলা থেকে তার ট্রলারে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহায়তা করা হবে। তিনি আরও বলেন, একটি মহল ইলিশ রক্ষার অভিযানকে বানচাল করতে বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। পুলিশের বক্তব্যের বিষয়ে ইউএনও বলেন, তারা কি বলেছেন সেটা তারাই ভালো জানেন। তবে ট্রলারে কোন অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেনি। জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।