বৈশ্বিক মহামন্দা, দুর্ভিক্ষ,যুদ্ধ ইত্যাদিতে বিরাজিত মহাসংকটের মধ্যেই ধ্বনিত হচ্ছে পরমাণু যুদ্ধের আশংকা। যা এতদিন ধ্বনিত হয়েছে অনেক দেশের নেতার কণ্ঠে। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষেরও কণ্ঠে এটি ধ্বনিত হয়েছে। এ অবস্থায় পরমাণু বিশ্ব যুদ্ধের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন বিশ্বের প্রধান পরাশক্তি-যুক্তরাষ্ট্র’র প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি গত ৬ অক্টোবর বলেন, স্নায়ুযুদ্ধের পর পৃথিবী প্রথমবারের মতো মানবসভ্যতা-বিধ্বংসী পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকিতে পড়েছে। ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের যে হুমকি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন দিয়েছেন, তা কোনো তামাশা নয়। উল্লেখ্য যে, নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধ চলছে অনেক দিন থেকেই। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক সম্ভাব্য এ যুদ্ধের সূচণা ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালায়। ফলে শুরু হয় দু’দেশের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ। তাতে ইউক্রেনকে সার্বিকভাবে সহায়তা করছে আমেরিকা ও তার মিত্ররা। এ যুদ্ধে ইউক্রেন ও রাশিয়ার খাদ্য ও জ্বালানী বিক্রি বন্ধ হয়েছে। এছাড়া, বৈশ্বিক নিত্য পণ্যের সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হয়ে মূল্যস্ফীতি ব্যাপক বেড়েছে বিশ্বব্যাপীই। ফলে বৈশ্বিক করোনা মহামারি সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামন্দা তীব্রতর হয়েছে। খাদ্য সংকট মারাত্মক হয়ে দারিদ্র বেড়েছে অনেক। উপরন্তু আগামী বছর বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হবে বলে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছে। আঙ্কটাডও বলেছে, আগামী বছর এ মন্দা বিশ্বব্যাপী আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। এটা হলে দারিদ্র বেড়ে যাবে কল্পনাতীত। অসংখ্য মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটবে অনাহারে। তবুও তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে যুদ্ধ বাধানোর পায়তারা করছে। তাতে সামিল হয়েছে আমেরিকার মিত্ররাও। চীন ও তার মিত্ররাও তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়ার কঠোর হুশিয়ারি জানাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তিত্ব অটুট রাখার প্রচেষ্টা থেকেই বিশ্বের চলতি সংকটের উদ্ভব। কারণ, তার প্রতিপক্ষরা বহুপক্ষত্ববাদ বিশ্বের পক্ষপাতী। কিন্তু আমেরিকা তার একক পরাশক্তিত্ব অটুট রাখার জন্য মরণ কামড় দিয়েছে! তাতে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা করছে তার মিত্ররা ও তাদের ঘরাণার মিডিয়া!
বর্তমানে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, ইসরাইল, ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার কাছে বহু পরমাণু বোমা আছে। সর্বোপরি তাদের অনেকের কাছে রয়েছে পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম বহু দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। এছাড়া, শব্দের চেয়ে ৫-৭ গুন বেশি দ্রত গতির হাইপারসোনিক যুদ্ধ বিমানও রয়েছে। তাই যেকোন একটি দেশ ভুল করেও একটি পরমাণু বোমা ছুড়লেই সাথে সাথেই বিশ্বব্যাপী পরমাণুযুদ্ধ শুরু হবে। যার পরিণতি হবে কল্পনাতীত ধ্বংস। তথা সে যুদ্ধের পরিণতি দেখার কেউ বেঁচে থাকবে না। উপরন্তু বিশ্বের সব কিছু বিলীন হয়ে যাবে।
কিন্তু ‘মরিতে চাহিনা আমি এ সুন্দর ভুবনে। দু নয়ন ভরে দেখিতে চাহি আমি বিশ্বের ও মহাবিশ্বের সব নৈসর্গিকতা’। তাই যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। সে লক্ষ্যে বিশ্বের প্রতিটি সংকট সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করতে হবে। নতুবা জাঁতি সংঘের মধ্যস্থতায়। তবেই, পরমাণু যুদ্ধসহ সব যুদ্ধের আশঙ্কা দূর হবে। বিশ্বে শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নতি বজায় থাকবে। মহামন্দা ও দুর্ভিক্ষাভাব দূর হবে। তাই বিশ্ববাসীর একসাথে সমস্বরে গগনবিদারী আওয়াজ তুলতে হবে-যুদ্ধ চাই না-শান্তি চাই। এ ক্ষেত্রে যুদ্ধ বিরোধী দেশ, মানবাধিকার সংগঠন, মিডিয়া ও ধর্মীয় গুরুদের বলিষ্ঠ ভূমিকার পালন করা দরকার।