বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ কারণে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বের প্রায় সব দেশই খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধির বড় ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বহু দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষকে খাদ্য সংকটজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। এমনকি কিছু এলাকায় প্রবল খাদ্য সংকটের কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। করোনার সময়ে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন কম হওয়া ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্যোৎপাদন কমে যাওয়া, বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও কৃষি উপকরণের সংকটে খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে খাদ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এতে সার্বিকভাবে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। নিজেদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে বহু দেশ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপকরণ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। কয়েকটি দেশ খাদ্য রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে অন্য দেশের ওপর নির্ভর না করে সব ধরনের খাদ্যপণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এখন অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ভোক্তাদের। প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দরে। ফলে নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রেতার দীর্ঘশ্বাস বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে গরিব মানুষ। জানা গেছে, গত ১২ বছরের মধ্যে দেশে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অতীতে আমরা লক্ষ্য করেছি, ভরা মৌসুমেও চালের বাজার অস্থির ছিল। এটা ছিল অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির ফল। বস্তুত অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে সব ধরনের নিত্যপণ্যের বাজারই অস্থির করে তোলে। দুঃখজনক হলো, অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তুললেও বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর তৎপরতা একেবারেই দৃশ্যমান নয়। অভিযোগ রয়েছে, বাজার পর্যবেক্ষণে জড়িত অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের যোগসাজশের কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এসব ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নীরব কেন? অসহায় ক্রেতারা এখন অনেক জরুরি পণ্য না কিনেই বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থায় স্বল্পআয়ের ও দরিদ্র মানুষের সুরক্ষার জন্য সামাজিক নিরাপত্তার পরিধি বাড়াতে হবে। জানা গেছে, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ না থাকায় এখন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে কৃষকের সেচ কার্যক্রম। সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব ধরনের কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করার পদক্ষেপ নেওয়া না হলে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে কিনা, এ বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভোগ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যে আমদানিনির্ভরতা কাটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যদিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে বাজার তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অহেতুক কেউ যেন দাম বাড়াতে না পারে, সেজন্য বাজারে কঠোর তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি কৃষিতে খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে -সে বিষয়ে অনেকদিন ধরেই বলছিলেন। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি সে বিষয়টিকে আবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এবং খাদ্য উৎপাদন যাথাসাধ্য বাড়ানোর পরামর্শ দেন। আমাদের উচিৎ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শকে গুরুত্বসহকারে নিয়ে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে মনোযোগী হওয়া।