আমন ধান চাষে নতুন স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। এ যেন বসন্ত বাতাসে আমন ধানের সবুজ ঢেউ কৃষকদের মন ভরিয়ে দিচ্ছে। ঢেউয়ের মতো খেলে যাচ্ছে ধান গাছের সবুজপাতা ও কাঁচা শীষ। কয়েকদিনের মধ্যেই শীষে দুধ-দানা গঠন শুরু হবে। আর এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে উঠছে প্রকৃতি। রোপা আমন ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন।
ধানের কাঁচা শীষ দেখে আনন্দে বুক ভরে উঠে কৃষকের মন। তবে কৃষি বিভাগের দাবি, অনুকূল আবহাওয়া, কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা, যথা সময়ে জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে এবার আমন চাষের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষি বিভাগ। ফলে মাঠে দোল খাওয়া সবুজ ধানে নতুন স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ২১ হাজার ৬শ ১৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাইব্রিড জাতের ৫ হাজার ৩৫৫ হেক্টর, উফশী জাতের ১৬ হাজার ২০৫ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ২ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমি। ক’দিন পরেই ধানের সবুজ চারা এবং কাঁচা শীষ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালি ধানের শীষে ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ। সোনালি ধানে ভরে উঠবে কৃষাণীর শূন্য গোলা। আমন মৌসুমকে ঘিরেই এমন স্বপ্ন দেখছে এ অঞ্চলের কৃষকরা।
উপজেলা আ.লীগ সভাপতি ও সাবেক অধ্যক্ষ সইদুল হক বলেন- বর্তমান দেশের সরকার কৃষি বান্ধব দেশ উন্নয়নে কৃষক যেন তার কষ্টের ফসল আগাম ঘরে নিতে পারে তার জন্য নানা ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজ করছে।
এ বছর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, সার, বীজ ও বালাইনাশক সংকট কিছুটা থাকলেও সময় মতো বৃষ্টি হওয়ায় এ সংকট কেটে উঠেছেন কৃষকের। ফলে ফসলের মাঠ অনেক সৌন্ধর্য ভরপুর। ধানের সবল-সতেজ চারা এবং শীষ বের হয়েছে। তাই এবার ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। সম্প্রতি উপজেলার ৪নং লেহেম্বা ইউনিয়নের পাটগাও গ্রামের শরিফুল ইসলাম মানিক বলেন, রোপা আমন ধানের মাঠে সবুজের সমারোহ। প্রতিটি ধানের ক্ষেতে দুলছে সবুজপাতা। ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষকের। কৃষকরা মাঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান গাছের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠে সেচ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ এবং পার্চিং ব্যবহার করছেন অনেকেই। এসএমই কৃষক খলিলুর রহমান জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে চাষাবাদকৃত আমন ধান গতবারের চেয়ে এবার ভালো হয়েছে। আগামী ১ দেড় মাসে ধান কাটা শুরু হবে। তখন পূরণ হবে আমাদের স্বপ্ন।
উপজেলার বাচোর গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন জানান, এ বছর ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। কোনো ধরণের প্রাকৃতিক দূর্যোগ না ঘটলে বিগত বছরের তুলনায় এবার তারা ভালো ফলন ঘরে তুলতে পারবেন। ধান ক্ষেতে দুই দফায় সার-কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। ধানগাছের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে এবারে ভালো ফলন পাওয়া যেতে পারে। সরকার যদি ধানের ন্যায্য দাম দেয় তাহলে লাভবান হবেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, আমন ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তাই আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি। কৃষকদের ভালো ফলন পেতে সারের চাহিদা মেটাতে হিমসিম খেতে হয়েছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের। এর পরেও কৃষকদের কৃষি পরামর্শের পাশাপাশি সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তারা।