রংপুরের পীরগঞ্জে প্রায় কুড়ি বছর ধরে ছোট্ট দোকানঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন খোকা মিয়া রাবেয়া বেগম নামের এক দম্পতি। রাস্তার পাশে ছোট্ট একটি দোকান তাদের। গত ২০ বছর ধরে খোকা মিয়া (৬৫) ও তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম(৫০) ছোট্ট দোকানঘরে বসবাস করেন। দোকানে প্রতিদিন যা আয় হয়, তা দিয়েই তাদের কোনরকমে সংসার চলে। ফলে অন্যান্য চাহিদা মেটাতে না পেরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন এই দম্পতি। গৃহহীন হয়ে প্রায় দুই যুগ ধরে তারা পীরগঞ্জের চতরাহটে সরকারি রাস্তার পাশে দোকান ঘরে বসবাস করছেন। বাড়ি,টিউবওয়েল, খাদ্য ও বস্ত্রের অভাবে সীমাহীন কষ্ট করছেন। জায়গাজমির অভাবে তাদের ৩ ছেলে বিয়ে করে শশুর বাড়িতে বসবাস করছে। সন্তানদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের মৃত্যু আবদুল অহেদ আলীর ছেলে খোকা মিয়া। বয়সের কারণে শরীর বেঙ্গে গেছে। তাই ভারী কাজ করতে পারেন না,এজন্য মুদি ব্যবসা শুরু করেন। এর আগে দিনমজুরী করতেন তিনি। সরেজমিন দেখা যায়, চতরাহাট ব্রীজের পশ্চিম পাশে ২০০২ সালে ছোট্ট একটি মুদি দোকান দিয়ে মেঝেতে স্বামী স্ত্রী রাত্রি যাপন করেন। সেখানে খোকা মিয়ার দোকান ছাড়া আর কারো দোকান ছিল না। বর্তমানে একের পর এক দোকান দিয়ে ভরপুর হয়ে গেছে। স্থানটি তাই খেকার বাজার নামে পরিচিতি পেয়েছে। ওই বাজারে তিনি কোন স্থান না পেয়ে চতরা ব্রীজের পূর্ব পাশে রাস্তায় গত ১ বছর ধরে দোকান দিয়ে সেখানেই বসবাস করছেন। দোকানে স্বল্প পরিমাণে চা পান,চানাচুর, বিস্কুট, পাউরুটি, কয়েল, সাবান, শ্যাম্পু, লবন, ডালসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে। সব মিলিয়ে আনুমানিক ২ থেকে ৩ হাজার টাকার পণ্যসহ জোড়াতালির একটি টিভিও রয়েছে। প্রতিদিন তার দোকানে ৩’শ থেকে ৫’শ টাকার মালামাল বিক্রি হয়। এতে আয় হয় ১ থেকে দেড়’শ টাকা। চতরাহাট এলাকার লোকজন বলছেন, খোকা মিয়ার জায়গা জমি এবং ঘর বাড়ি নেই। আছে একটিমাত্র চা পানের দোকান। এই দোকানেই তাদের সংসার। সরকারি একটি ঘর পেলে তাদের দুঃখ কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে বলে স্থানীয়রা মনে করেন। ঘরবাড়ি এবং টাকাপয়সা না থাকলেও তাদের সংসারে ভালোবাসার অভাব নেই। খোকা মিয়া বলেন, বাপের জায়গায় জমি ছিল সেগুলো তার আমলেই শেষ হয়েছে। ছোট থেকেই তিনি মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন। মানুষের বাড়িতে থেকেই বিয়ে করেন। তার সংসারে ৩ জন ছেলে। বড় হয়ে ছেলেরা বিয়ের পর শশুর বাড়িতে থাকে। কার খবর কে রাখে ? চতরা তহশিল অফিসে একাধিক বার ঘরের জন্য ধরনা দিয়েও কোন কাজ হয়নি। শেষ বয়সে তাই একটি মাত্র ঘরের জন্যই লালায়িত সে। স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, ২০ বছর থেকে দোকান ঘরে বসবাস, বাড়ি কি জিনিস তা তিনি জানেন না, মানুষের বাড়ি থেকে পানি আনতে হয়। বৃষ্টির দিনে রানা বান্না হয়না চা বিস্কুট খেয়ে দোকানেই ঘুমাতে হয়। চতরা ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন বলেন, চতরাহাটে এরকম বেশ কয়েকটি ভুমিহীন পরিবার রয়েছে। তাদের মাথা গোঁজার মতো কোন ঠাঁই নেই। ইউনিয়ন পরিষদের মাঠেও এক পরিবার রয়েছে। যার কোন ঘর নেই !