বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন মতে, করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশেই। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ডলারের বিপরীতে টাকার মানও কমেছে। এতে আমদানি পণ্যের খরচ বেড়েছে। এসব মিলে ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান ও মিয়ানমারের চেয়ে বাংলাদেশে পণ্যের দাম বেশি হারে বেড়েছে। এর নেপথ্যে সিন্ডিকেট, কারসাজি ও বাজার তদারকির ব্যর্থতা দায়ী। গত এপ্রিল-জুন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারদর বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে-যুগান্তর।পণ্য মূল্য বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে অনেক। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি জানান, মূল্যস্ফীতির হার ছিল গত আগস্টে ৯.৫% ও সেপ্টেম্বরে ৯.১%-প্রতিদিন। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানী তেলের দাম অনেক কমেছে। সম্প্রতি এফএও’র প্রতিবেদন মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর নানা উদ্যোগের কারণে এপ্রিলে খাদ্য পণ্যের বৈশ্বিক বাজার নিম্নমুখী হতে শুরু করে। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরেও দাম কমেছে। এ নিয়ে টানা ছয় মাস ধরে বাজার নিম্নমুখী রয়েছে- বণিক বার্তা।সর্বোপরি পণ্য মূল্য কমানোর লক্ষ্যে সরকার অনেক দিন থেকে সারাদেশে টিসিবি ও ফ্যামিলী কার্ডের মাধ্যমে চাল, আটা, চিনি, ভোজ্য তেল ও ডাল স্বল্প মূল্যে বিক্রি করছেন। এছাড়া, খাদ্য পণ্য আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবুও দেশে পণ্য মূল্য বেড়েই চলেছে!
পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের সংসার চালানো দূরহ হয়ে পড়েছে। কারণ, তাদের উপার্জন বাড়েনি। বরং অনেকে কর্ম হারিয়েছে এবং অনেকের উপার্জন কমেছে। তাই অনেকেই খেয়ে-না খেয়ে থাকছে। অনেকেই খাদ্য গ্রহণ কমে দিয়েছে। ফলে দেশে পুষ্টিহীনদের সংখ্যা বাড়ছে। সর্বোপরি দারিদ্রের সংখ্যাও বাড়ছে। আইএফপিআরআই’র তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর শুধু খাদ্য, জ্বালানি ও সারের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির কারণেই নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে পতিত হয়েছে বাংলাদেশের অন্তত: ৫০ লাখ মানুষ-বণিক বার্তা।
দেশে পণ্য মূল্য বৃদ্ধির পেছেনে সরকারের কিছু নীতি দায়ি। যেমন: আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানী তেলের দাম কমার সময় সরকার দেশে জ্বালানীর দাম বাড়িয়েছেন অনেক। ফলে পণ্য মূল্য কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া, ভোজ্য তেলের দাম কমানোর জন্য একবার ভ্যাট স্থগিত, মূল্য কমানো, আবার ভ্যাট স্থগিত প্রত্যাহার, আবার ভ্যাট স্থগিত তথা হযবরল অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে দিনে কোটি টাকা লোপাট হয়েছে-জার্মান বেতার। পণ্য মূল্য বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক চাদাবাজিও দায়ী! খবরে প্রকাশ, চট্রগ্রাম নগরীর ১৫টি খাত থেকে প্রতি মাসে আদায় করা হয় কমপক্ষে ৬০ কোটি টাকাণ্ডপ্রতিদিন। এ অবস্থা সারা দেশেই চলছে এবং তা অনেক দিন থেকেই। তবে, সর্বাধিক ঢাকায়। ফলে পন্য মূল্য বেড়েছে। অপরদিকে, ব্যবাসায়ীদের বেশিরভাগ অতি মুনাফালোভী। সে কারণেও পণ্য মূল্য বেড়েছে!
যা’হোক, পণ্য মূল্য কমানো আবশ্যক। সে জন্য সার্বক্ষণিক বাজার তদারকি করতে হবে। তাতে যার বিরুদ্ধে মূল্য বেশি নেওয়া প্রমাণিত হবে, তাকে তাৎক্ষণিকভাবেই কঠোর শাস্তি দিতে হবে। এছাড়া, চাদাবাজি কঠোর হস্তে নির্মূল করতে হবে। সর্বোপরি টিসিবির ও ফ্যামিলী কার্ডের কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। তবেই পণ্য মূল্য স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে।