গ্যাস সংকটের কারণে দেশে এখন মধ্যরাতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুতের লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। কখনো ভোরেও আচমকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ছে অনেক এলাকা। তীব্র গরমে লোডশেডিংয়ে নাভিশ্বাস উঠছে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষের। খোদ রাজধানীতে এখন ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এদিকে দিনে-রাতে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টাও লোডশেডিং করা হচ্ছে গ্রামের বেশির ভাগ অঞ্চলে। বিদ্যুতের অভাবে শিল্পকারখানায় উৎপাদন বিঘিœত হচ্ছে। এ ছাড়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে কৃষকের সেচ কার্যক্রম। জানা গেছে, কারিগরি ত্রুটি, রক্ষণাবেক্ষণ, জ¦ালানি স্বল্পতা ও অন্যান্য কারণে দেশের অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দেশে চাহিদার তুলনায় কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় দেশব্যাপী তীব্র লোডশেডিং করতে হচ্ছে। অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে এলএনজি আমদানি কমানো হয়েছে। ফলে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন কমেছে। দেশে গ্যাসচালিত ৫৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। অথচ সেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি অলস পড়ে আছে গ্যাসের অভাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে সৃষ্ট সংকটের অন্যতম কারণ অতিরিক্ত আমদানিনির্ভরতা। বিশ্ববাজারে জ¦ালানির মূল্য সব সময় অস্থির থাকে, এটা বহুল আলোচিত। দেশে গ্যাসের অনুসন্ধানে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হলে জ¦ালানি খাত এতটা নাজুক পরিস্থিতির মুখে পড়ত না, এমনটাই মনে করেন এ খাতের অনেক বিশেষজ্ঞ। প্রশ্ন হলো, বিশ্ববাজারে যদি জ¦ালানির দাম কাঙ্খিত মাত্রায় না কমে, তাহলে আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে কর্তৃপক্ষ কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে? যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে যদি বিশ্ববাজারে জ¦ালানির দাম আরও বাড়ে, তাহলে কর্তৃপক্ষ কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে? বিদ্যুৎ খাতের চুরি-দুর্নীতি রোধ করা হলে আশা করা যায়, এ খাতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য জ¦ালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা কমাতে হবে। দেশে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায়ও সমস্যা রয়েছে। দেশের অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনের অবস্থা বেহাল ও জরাজীর্ণ। কয়েকদিন আগে সঞ্চালন লাইনে বড় ধরনের বিভ্রাটের কারণে দেশের প্রায় অর্ধেক অংশ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সব ধরনের জরুরি সেবা ব্যাহত হয়েছে; রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাসপাতালগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রমও ব্যাহত হয়েছে। দেশে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থায় সমস্যা ও ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির বিষয়টি বহুল আলোচিত। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে একের পর এক রেকর্ড হলেও সঞ্চালন ও বিতরণের দুর্বলতা কাটানো সম্ভব হচ্ছে না। সঞ্চালন লাইন শক্তিশালী করতে নেওয়া প্রকল্পগুলোর সার্বিক অগ্রগতি সন্তোষজনক না হলে আগামী দিনে দেশবাসী বিদ্যুৎ খাতের প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত হবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির চাহিদা। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও গ্যাস পাওয়া না গেলে শিল্পোদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এ অবস্থায় শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রাপ্যতা নিশ্চিতের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে কৃষি খাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা না হলে ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানিনির্ভরতা বেড়ে যাবে। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে সময়োপযোগী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।