কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদী পাড়, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় কাশফুল বনে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। সকালের সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত শেষে মাথার উপর চাঁদ ওঠা পর্যন্ত অবস্থান করেন দর্শনার্থী-পর্যটকরা। এই ভিন্নরকম আনন্দ মেলায় যোগ দিচ্ছেন শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী শ্বেতশুভ্র গালিচার মতো সাজানো কাশফুল বন এলাকায় এমন প্রাণ-প্রকৃতির মেলবন্ধনের শৈল্পিক আয়োজন চোখে পড়ে। ঋতুর রানী শরতের এখন ভরা যৌবন। শরতের অপরূপ অলঙ্কার নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর বনে বনে শ্বেতশুভ্র স্নিগ্ধ কাশফুল তার অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য মেলে ধরেছে। আর প্রকৃতির এমন অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখতেই ছুটছে প্রকৃতি রসিক লোকজন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়ার মির্জাপুর ব্রহ্মপুত্র নদপাড়ের কাশফুলের এ বিশাল সা¤্রাজ্য দেখতে তাই প্রকৃতি প্রেমীদের আনাগোনা। ওপরে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা,সূর্যের তপ্তদহন আর চাঁদের স্নিগ্ধ হিরন্ময় আলো-ছায়ায় কাশবনে মৃদুমন্দ উদাস বাতাসে চলে প্রকৃতিপ্রেমী নারী-পুরুষের লুকোচুরির খেলা। মুখে মুখে শারদ প্রকৃতির গান আর হৈল্লোাড়ে প্রাণ প্রকৃতিকে অবগাহন করে মেতে উঠছেন অনাবিল আনন্দ-উল্লাসে।
মেঘনা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত কাশফুল বনে দেখা হয় একঝাঁক তরুণীর সঙ্গে। তারা সেই সময় লুকোচুরি খেলে এবং দু’হাত মেলে যেন মুক্ত বিহঙ্গের মতো কাশফুল বনে উড়ে বেড়াচ্ছিল। আর কয়েক দিন পরই ঝরতে শুরু করবে কাশফুলের হিরণ্ময় ফুলগুচ্ছ। শুকনো গাছ হয়ে উঠবে দরিদ্র কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর ঘর ও জ¦ালানির উপকরণ। তাই তাদের সামনেও স্বপ্নের হাতছানি। কিছু কিছু শুকনো কাশফুল গাছ কেটে নিয়ে ঘরে তুলতেও ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মরিয়ম-খোদেজা বেগমের মতো অনেক দরিদ্র গৃহবধূ।
পাকুন্দিয়া উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদপারের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল শরৎ ঋতুতে কাশফুলের এমন অফুরন্ত সা¤্রাজ্যের রূপধারণ করে। গালিচার মতো কাশফুলের শ্বেতশুভ্র স্নিগ্ধ অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য তখন প্রকৃতিপ্রেমীদের মোহনীয় রূপে হাতছানি দিচ্ছে। এছাড়াও জেলা সদরের ষোলমারা এলাকায় কাশফুল প্রেমীদের আনাঘোনা লক্ষনীয়। হোসেনপুরের চরাঞ্চলেও কাশফুলের শুভ্রতা ছড়াচ্ছে।
কটিয়াদী উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদ তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান বলেন, প্রতিবছর শরতে আমাদের এই নদীর পাড়ে প্রচুর কাশফুল ফোটে। কাশফুলের সাদা রঙে চারপাশ ছেয়ে যায়। চমৎকার লাগে দেখতে। নদীর পাড়ে অনেক লোকজন আসে ঘুরতে। কাশফুল দেখলেই বোঝা যায় শরত এসেছে।
প্রকৃতিপ্রেমী ছাইদুর রহমান নাঈম বলেন,কাশফুল যেমন সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি ফুল ঝড়ে যাওয়ার পর কাশফুলের ডগা সংগ্রহ করে ঝাড়ু তৈরি করা হয়। অনেকেই এগুলো কেটে নিয়ে যায়। তাছাড়া বাণিজ্যিকভাবেও এগুলো বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় কলেজের শিক্ষার্থী তাসনীম বলেন,কাশফুল বালু মিশ্রিত মাটিতে প্রচুর জন্মে। পদ্মার পাড়ে,আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে,উপজেলাসহ চরাঞ্চল এলাকায় প্রচুর জন্মে কাশফুল। প্রকৃতিতে যে শরত এসেছে,তা কাশফুল না ফুটলে টের পাওয়া যেতো না। শরতের সৌন্দর্যই যেন এই কাশফুল!
আলাপকালে কয়েকজন জানান, গ্রামবাংলার প্রকৃতি পাল্টে যাচ্ছে দিন দিন। উজার হচ্ছে গাছপালা। ভরাট হচ্ছে জলাশয়। নদ নদীর পাড়ের মাটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে ‘বালুখেকোদের’ কবলে পড়ে। প্রতিবছরই শুকনো মৌসুমে নদ-নদীর পাড়ে মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করছে অনেকেই। এতে করে নদীপাড়ের ভারসাম্য হারাচ্ছে। উজার হচ্ছে সমতল চরাঞ্চল। এদের কবলে পড়ে কাশফুলও হারিয়ে যেতে বসেছে। অতীতের মতো কাশফুল চোখে পড়ে না বর্তমানে।