জেলার নকলা উপজেলার সুতিখালি, বলেশ্বর ও সুবর্ণখালি সহ শেরপুরের বিভিন্ন নদ-নদী, উন্মুক্ত জলাশয় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, খনন, সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবীতে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগ শেরপুর কমিটি। রোববার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, সুতিখালি নদী জেলার অন্যতম দেশি মাছের অভয়ারন্য বলে পরিচিতি থাকলেও অবৈধ দখলদাররা নদীতে বাঁধ দিয়ে শতাধিক পুকুর তৈরির মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে সেখানে মাছ চাষ করছে। নাগরিকদের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর সুতিখালি নদী থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছিলো। সেসময় নদীটির বেশ কিছু অংশ উদ্ধার করা হলেও অজ্ঞাত কারণে কিছুদিন পর সেই উদ্ধার অভিযান স্থবির হয়ে পড়ে। এখনও দখলদাররা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এতে নদীটি নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। এখনই নদীটি দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করে খননের মাধ্যমে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ সৃষ্টি করা না গেলে একসময় হয়তো সুতিখালি নদী শেরপুরের মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে। নকলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা সুবর্ণখালি নদীর অবস্থাও ভালো নেই। অবৈধ দখলদাররা নানা ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করে গ্রাস করে নিচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকা। ক্রমে সঙ্কুচিত হয়ে গতিহীন হয়ে পড়ছে নদীটি। নকলা শহরের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে চলা প্রবাহমান বলেশ্বর নদী দখল ও নাব্যতা সংকটে হারিয়ে গেছে। স্বাভাবিক প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করে বাঁধ নির্মাণ সহ নানা অত্যাচারে জেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, ভোগাই, চেল্লাখালি, মৃগী, সোমেশ্বরি, ঝিনাই, কালাঘুষা, দশানি, মহারশি সহ অন্যান্য নদী এবং পাহাড়ি অঞ্চলের বিভিন্ন ছড়া, ঝোরা, ঝরণা আজ গতিহীন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া শ্যালোচালিত ড্রেজার মেশিন বসিয়ে জেলার বিভিন্ন নদ-নদী থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এতে ভু-প্রকৃতিক পরিবর্তনের ফলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। সরকারিভাবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা এবং শাস্তির আওতায় আনলেও বালু খেকোদের নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না। জেলার নদ-নদী, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে জীববৈচিত্র বিনষ্ট সহ কৃষিনির্ভর শেরপুর জেলার কৃষি অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। শেরপুর জেলার ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। এজন্য জনউদ্যোগ কমিটির পক্ষ থেকে স্মারকলিপিতে ৬ দফা দাবী তুলে ধরা হয়েছে। জেলার কৃষি অর্থনীতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে নদ-নদী, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার, নদ-নদী, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো খনন করে পানির প্রবাহ ও ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, বিভিন্ন নদী খনন করে প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ, ভুমি সংস্কারের নামে ভুমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বিতরণের সময় নদী ও জলাভুমির বর্ষাকালীন প্রবাহপথ নদী ও জলাভুমির অধিকারপথ হিসেবে অক্ষত রাখা, সকল নদী ও জলাভুমি সিএস ম্যাপ অনুযায়ী খাসজমি হিসেবে অক্ষুন্ন রাখা, আরএস বা এসএ ম্যাপে কিংবা বিআরএস ম্যাপে খাসজমি ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দেখালে তা বাতিল করা, পরিকল্পিতভাবে নদী থেকে মৎস্য ও খনিজ সম্মদ আহরণ করতে করা, কোনক্রমেই নদীর জীববৈচিত্র্য কিংবা স্বাভাবিক গতিপথ নষ্ট না করা এবং নদীতে অপরিকল্পিত বাঁধ, ড্যাম, ব্যারেজ নির্মাণ বন্ধ করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখার দাবী জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার স্মারকলিপি গ্রহণ করে বলেন, বিষয়গুলোর খোঁজখবর নিয়ে জেলার নদ-নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।