রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড়আলমপুর ইউনিয়নের পাটগ্রাম মৌজার আদিবাসীদের জায়গাজমি থেকে উচ্ছেদ করতে একের পর এক হয়রানি মূলক মামলা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব মামলার খরচ যোগাতে সংসার উজাড় করে দিচ্ছেন ৩ সম্প্রদায়ের শতাধিক আদিবাসী পরিবার। মামলার ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। গত ১৫ অক্টোবর উপজেলা পাটগ্রাম আদিবাসী পাড়া একাধিক মামলার আসামিদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত। পীরগঞ্জ উপজেলার রায়পুর শ্রীযুক্ত বাবু সূর্য কুমার সিংহ রায়, বীরেন্দ্রনাথ রায়, বৈদ্যনাথ রায় এবং রামায়ণ রায়সহ ৪ জমিদারে পাটগ্রাম আদিবাসী পাড়ায় একসময় পৃথক ২ দাগে ৪৯ একর ৯৮ শতক জমি ছিল। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে বর্ণিত জমিদারগং দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। জমিদারগং দেশ ত্যাগের পূর্বে ৩ সম্প্রদায়ের আদিবাসী, হিন্দু এবং মুসলিম প্রজাদের কে দাখিলা ও কবুলিয়ত মূলে পাটগ্রাম মৌজায় ৪৯ একর ৯৮ শতক জমি লিখে দিয়ে যান। যার জেএল নং ১৭২ পুরাতন দাগ ১২১২ ও ১০২৪ বর্তমান ১৪৮৭ ও ১৬৬৭। উল্লেখ, পাটগ্রামের আদিবাসী ও অন্যন্য সম্প্রদায়ের লোকজন সেই সময় থেকেই বসতবাড়ি এবং কৃষি আবাদি জমি ভোগদখল করে আসছেন। স্থানীয় লোকজন বলছেন, গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার দারাজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ছিল। তিনি দীর্ঘদিন পীরগঞ্জে তহশিল অফিসের (দেওয়ান) দেওয়ানী ছিলেন। তিনি অবৈধভাবে এসব জায়গাজমির কাগজপত্র তৈরি করে জমিদার সেজে জয়পুরহাট জেলার জিল্লুর রহমান,পাটগ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক নামের দুই ব্যক্তির নিকট গোপনে জমি বিক্রি সৃজিত কাগজপত্র তৈরী করেন দেন। জমির ভুয়া মালিক হবার পরেও এরা কোনদিনও ওই জমির দখল নিতে পারেনি। পীরগঞ্জ উপজেলা ভুমিহীন কল্যাণ সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকলেছুর রহমান জানান,দারাজ উদ্দিন জমি দখল নিতে আদালতে মামলা দায়ের করেন। সেই সময় ওই জায়গাজমি আদিবাসীদের দখল থাকায় পাকিস্তানের শাসনামলে ১৯৬৯ সালে গেজেট অনুযায়ী বাংলাদেশ বন বিভাগের নামে গেজেটভুক্ত হয়। সেই সূত্র ধরে পীরগঞ্জের কাদিরাবাদ বন (বিট) ২০১৭ সালে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫ টি উচ্ছেদ মামলা দায়ের করে। পীরগঞ্জ (রংপুর) সাব জজ আদালতে দায়েরকৃত যাহার মামলা নং ২১২/১৭,২৬৮/১৮,৩৩২/২১, ৩৩৩/২১, ৩৬/২২। পাটগ্রামের মৃত্যু নেজাব উদ্দিনের ছেলে আবু বক্কর ২ টি মামলা দায়ের করে যাহারা মামলা নং ---৩১২/২২, ১১৬/২২। হয়রানি মূলক মামলায় তিন সম্প্রদায়ের বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ৬৪ জন ব্যক্তি কে মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। মামলার খরচ যোগাতে তাদের অভাব ানাটনের সংসার এখন দুর্বিসহ। ভূমিহীন কল্যাণ সমিতির পাটগ্রাম(শাখা) সভাপতি সলেমন মর্মু বলেন, কয়েক শত বছর ধরে জায়গাজমি ভোগদখল করে আসছে তাদের বংশধর। অথচ তাদেরকে জায়গায় জমি থেকে উচ্ছেদের জন্য একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন, অবৈধ কাগজপত্রের দুই ব্যক্তি। রোজিনা সরেন বলেন,আমরা বাপদাদার ঘরবাড়ি ছাড়াতে চাই না, আমরা বাঁচতে চাই। হাঁস-মুরগি, গরুছাগল, জিনিসপত্র বিক্রি করে একাধিক মামলার খোরাক জোগান দিতে হচ্ছে। এসব সাজানো মিথ্যা মামলা থেকে আমরা নিস্কৃতি চাই। সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন,অবৈধ কাগজপত্র দেখে দুই ব্যক্তি জমি কিনেছে অন্ধকারে, তাদের দায়েরকৃত মামলায় হয়রানি হতে হচ্ছে বছরের পর বছর। মামলার খরচ যোগান দিতে ঘরের টিন গাছপালা বিক্রি করতে হচ্ছে। এত মামলার খরচ যোগাতে গিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে বাঁচতে চাই। দেশের অন্যন্য নাগরিকের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চাই। এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য জয়পুরহাট জেলার জিল্লুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।