মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ অক্টোবর একনেক সভায় বলেন,’যেকোনো প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে জনগণের সর্বোচ্চ সুবিধা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। ফান্ড পাওয়া গেলেও কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার দরকার নেই। আমাদের যে কোনো প্রকল্প খুব সতর্কতার সাথে যাচাই-বাছাই করে নিতে হয়, যাতে সেই প্রকল্প থেকে আমরা কিছু রিটার্ন পেতে পারি; যা দেশের উপকারে আসে। আমরা (এখন শুধু) এই ধরনের প্রকল্প হাতে নেবো’।হ্যাঁ,প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য সঠিক।কারণ,স্বাধীনতাত্তোর থেকে এ পর্যন্ত বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়,অনেক প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ও রিটার্ন তেমন নেই।কিছু প্রকল্পের তো বিন্দুমাত্রও নেই। যার বড় প্রমাণ কিছু সেতু। প্রায়ই পত্রিকান্তরে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়,অমুক স্থানে সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক নেই।আবার কোন কোন সেতুর উচ্চতা অধিক হওয়ার কারণে বাঁশের মই দিয়ে উঠতে হয়।এরূপ অসংখ্য নজির রয়েছে বিভিন্ন কাজের।তবুও প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন ও অর্থমন্ত্রণালয় থেকে অর্থ দেওয়া হয়েছে।কিন্তু তাতে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের লাভ হলেও দেশবাসীর কোন লাভ হয়নি। এই অবস্থা বিদেশী ঋণের প্রকল্পেও হয়েছে। উপরন্তু বহু প্রকল্পের কাজের মান সন্তোষজনক নয়। তাই ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। যেমন: কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কিংবা স্বল্প সময় পরই ধসে যাওয়া।আবার রডের পরিবর্তে বাঁশ দেওয়া ইত্যাদি। আবার অর্থ ব্যয় হয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি। এসবেরও খবর প্রকাশিত হয়েছে বহু। এছাড়া, অধিকাংশ প্রকল্পই নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয় না। বারংবার সময় বাড়ানো হয়। তাতে ব্যয় বেড়ে যায় অনেক। আবার অনেক প্রকল্পের রিটার্ন তথা সুফল প্রাপ্তি/ধীর গতির। তাই এ নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রেরও। কারণ,বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার দিকে যত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তত গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ক্ষেত্রে। ফলে একদিকে, চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ দেওয়া যাচ্ছে না। তাই লোড শেডিং চলছে মাত্রাতিরিক্ত। অন্যদিকে, সরবরাহ করতে না পারায় বিদ্যুৎ প্লান্ট বসে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে অনেক। উপরন্তু ঋণের সুদ ও কিস্তিও দিতে হচ্ছে। ফলে ভর্তুকী কমাতে মূল্য বাড়ানো হয়েছে অনেক! আরো বাড়বে! তাই গত ১৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রীপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমাদের যে বহিঃ সম্পদ বিভাগ আছে তারা চুরি করার জন্য বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে আসে’। জবাব দিহিতা না থাকায় এ অবস্থা চলছে বহুদিন থেকেই। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর ওই নীতি যথার্থ ও সময়োপযোগী। তাই এই নীতি বাস্তবায়ন করতেই হবে।
অর্থাৎ যে কোন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে তার প্রয়োজনীয়তা ও রিটার্ন কি তা ভালভাবে যাচাই করতে হবে। তারপর গৃহীত প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে, অর্থে ও মানে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে যে কোন মূল্যেই হোক। নতুবা প্রকল্পের সংখ্যা বাড়বে। তাকে কেন্দ্র করে জিডিপি ও মাথা পিছু গড় আয় বাড়বে। কিন্তু দেশের প্রকৃত উন্নতি হবে না। বরং মানুষের কাঁদে সরকারী ঋণের বোঝা বাড়বে।