নওগাঁর মান্দায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দিন কাটছে আমেনা বেগম (২০) নামে এক প্রসূতির। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৩ দিন চিকিৎসার পর গত ১২ অক্টোবর তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এরপর বাবার বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এই প্রসূতি।
প্রসূতি আমেনা বেগমের স্বজনদের অভিযোগ, গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রসব বেদনা শুরু হলে আমেনাকে প্রসাদপুর বাজারের ফয়সাল ক্লিনিক এ- ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ওইদিন সিজারিয়ানের মাধ্যমে তিনি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এর কয়েকদিন পরেই ভুল অস্ত্রোপচারের কারণে তাঁর পেট ফুলে যায়। একই সঙ্গে শুরু হয় প্রচণ্ড ব্যথা।
এ অবস্থায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর আবারো তাঁকে নেওয়া হয় ওই ক্লিনিকে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার নামে ৫ হাজার টাকা নিয়ে কালক্ষেপণ করে। একপর্যায়ে চিকিৎসা না দিয়ে রাতে রোগিসহ তাঁর স্বজনদের সেখান থেকে বের করে দেন ক্লিনিকের লোকজন। পরে ওই রাতেই তাঁকে ভর্তি করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভুল অস্ত্রোপচারের অভিযোগ এনে প্রসূতি আমেনা বেগমের ভাই মোজাহারুল ইসলাম জেলা সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। ঘটনার তদন্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দপ্তর থেকে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটির প্রধান দায়িত্বে আছেন মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক তাসনিম হোসেন আরিফ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, মান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টর অলিক গোবিন্দ সরকার। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এ কমিটিকে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ গত ২৫ জুন প্রসাদপুর বাজারের ফয়সাল ক্লিনিক এ- ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অজ্ঞানের চিকিৎসক ছাড়াই অস্ত্রোপচারের কারণে আকলিমা বেগম নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বিভিন্ন দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের পর একইভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা সিভিল সার্জনের দপ্তর।
কিস্তু সাড়ে ৩ মাসেও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ক্লিনিক মালিকসহ জড়িত অন্যান্যের বিরুদ্ধে। এবারের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন একইভাবে ফাইলবন্দি হবে কি-না এনিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
প্রসূতি আমেনা বেগমের ভাই মোজাহারুল ইসলাম বলেন, বোন আমেনা বেগমের প্রসব বেদনা শুরু হলে প্রসাদপুর বাজারের ফয়সাল ক্লিনিকে নিয়ে ১০ হাজার টাকায় সিজারিয়ান করানো হয়। পরবর্তীতে ব্যথাসহ পেট ফুলে গেলে আবারো তাঁকে নেওয়া হয় ফয়সাল ক্লিনিকে। এ সময় ৫ হাজার টাকা নিয়ে চিকিৎসার নামে কালক্ষেপন করা হয়। পরে রাত ১২ টার দিকে রোগিসহ স্বজনদের সেখান থেকে বের করে দেন ক্লিনিকের লোকজন।
প্রসূতির মা রহিমা বিবি বলেন, ক্লিনিক থেকে বিতাড়িত হয়ে ওই রাতেই মেয়ে আমেনাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। বর্তমানে মেয়ের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। আবারো পেট ফুলে গেছে, একই সঙ্গে ব্যথাও হচ্ছে। একটু একটু করে মেয়ে আমার মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। মেয়ের চিকিৎসা করাতে এরইমধ্যে সর্বশান্ত হয়েছি। একই সঙ্গে শিশুর দুধ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবী করছি।’
মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বিজয় কুমার রায় বলেন, প্রসূতি আমেনা বেগমের স্বজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।