বৈরী আবহাওয়া, বীজসহ সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধিতে আগাম সবজি চাষ করে বিপাকে পড়েছে কুড়িগ্রামের চাষীরা। বৃষ্টিপাত আর উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে মাঠেই শুকিয়ে যাচ্ছে সবজির চারা। যা পলিথিন-কাঁথা দিয়ে ঢেকেও রক্ষা করা যাচ্ছে না। ফলে আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষীদের মাথায় হাত।
এদিকে, জেলা কৃষি বিভাগ সারের কোন সংকট নেই বললেও কৃষকরা বলছেন, চাহিদামতো সার পাওয়া যাচ্ছেনা। পেলেও কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলায় সবজির আঁধার খ্যাত রাজারহাটের ছিনাই এবং সদরের কাঁঠালবাড়ীতে চাষ হচ্ছে আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি। বাজারে শীতকালীন এই সবজির চাহিদা থাকায় গত কয়েক বছর ধরে আগাম সবজি চাষ করছেন এখানকার কৃষকরা। কিন্তু এবছর অতিরিক্ত বৈরী আবহাওয়ার কারণে বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তার উপর বীজ, সার ও কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সবজি চাষে অতিরিক্ত খরচ গুণতে হচ্ছে কৃষকদের।
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসাারণ বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন জানান, প্রথমে বীজ বপন করে ১৫ দিন বয়সী পুলি (চারা) তুলে বেডে লাগানো হয়। এতে সবমিলিয়ে ১১০ থেকে ১২০ দিনের মাথায় চাষীরা সবজি বিক্রি করার সুযোগ পান।
রাজারহাটের ছিনাই ইউনিয়নের বালার দীঘিরপাড় এলাকার কৃষক আবদুল গফুর (৬৩) জানান, দিন দিন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রান্তিক চাষীরা সবচেয়ে বেশী সমস্যায় ভুগছেন। যারা জমি ভাড়া বা বর্গা নিয়ে আগাম সবজি চাষ শুরু করেছেন তারা অতিরিক্ত খরচের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গতবার যে বীজ ৪০০ টাকা দরে কেনা হয়েছিল এবার সেটা কিনতে হচ্ছে ৫০০ টাকায়।
একই উপজেলার মীরেরবাড়ী এলাকার কৃষক কোরবান আলী (৬০) জানান, গরমকালে দুটো পয়সা বেশী পাওয়ার আশায় ফুলকপি লাগাই। কিন্তু এবার খরচ বেশি পরল। আবহাওয়া ভাল থাকলে কিছুটা লাভের মুখ দেখবো, নাহলে লোকসান গুণতে হবে। গতবার ইউরিয়া ও পটাশ সারের কেজি ছিল ১৮ টাকা করে। এবার তা কিনতে হলো ৩০ টাকা করে। এছাড়াও বীজ ও কীটনাশকের দামও বেড়ে গেছে।
একই এলাকার কৃষক আশরাফ আলী (৩৬) জানান, প্রচ- গরমে পুলিগুলো (চারা) দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। পলিথিন ও কাঁথা দিয়ে ঢেকেও রক্ষা করা যাচ্ছে না। এদিকে আবার টানা বৃষ্টিও হচ্ছে। আবহাওয়ার এই তারতম্যের কারণে বীজতলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চললে এবার খুব একটা বেশী লাভবান হতে পারবে না আগাম সবজি চাষীরা।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আজিজুল ইসলাম জানান, জেলায় দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ। গত বছর ৭০ হেক্টর হলেও এবছর প্রায় ৯০ হেক্টর জমিতে আগাম চাষ করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি খরা ও বৃষ্টির কারণে চারার কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা নতুনভাবে আবারো চারা রোপণ করছেন। আর আমাদের কাছে রাসায়নিক সার যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ রয়েছে। কোনো সংকট নেই। তবে সবজির মান বৃদ্ধির জন্য চাষীদের জৈব সার ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।