বগুড়ার শেরপুরে গৃহবধূকে হত্যার দায়ে ২৭ বছর পর স্বামীসহ তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া প্রত্যেকের ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হাবিবা মণ্ডল এ রায় দেন। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের পালাসন গ্রামের জিল্লুর রহমান, গোলাপ হোসেন ও খারতাপাড়ার ফরহাদ মণ্ডল। নিহত গৃহবধূ চায়না খাতুন দন্ডপ্রাপ্ত গোলাপ হোসেনের স্ত্রী ছিলেন।
মামলার বিবরণী সুত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে বাবার অমতে গোপাল উপজেলার পালাসন গ্রামের চায়নাকে বিয়ে করে শেরপুরের মির্জাপুরে বসবাস করছিলেন। তবে বনিবনা না হওয়ায় বিয়ের এক বছর পর তাদের বিচ্ছেদও হয়। কিন্তু বিচ্ছেদ হলেও চায়না ও গোলাপের মধ্যে যোগাযোগ বেশ মধুর ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে গোলাপের সঙ্গে তার পরিবার চাপ সৃষ্টি করে এবং তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছিল। এসব কারণে গোলাপ চায়নার সঙ্গে সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন করতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ রাতে উপজেলার পালাসন গ্রামে চায়নাকে ডেকে নেন প্রাক্তন স্বামী গোলাপ। এ সময় গোলাপকে সহযোগিতার জন্য জিল্লুর ও ফরহাদ উপস্থিত থেকে গল্প করার সুযোগে চায়নার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে তারা। এরপর চায়নার মরদেহ ওই গ্রামের এক বাড়ির সেপটিক ট্যাংকির ভেতরে লুকিয়ে রাখে আসামীরা। এ ঘটনার প্রায় দু’সপ্তাহ পর মরদেহ উদ্ধার হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে চায়নার পরিবার মরদেহ শনাক্ত করে। পরে নিহতের ভাই হাফিজার রহমান বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলার দুই বছর পর চার্জশিট দেয় পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরে এ মামলা শুনানি চলছিল। এর মাঝে মামলার আরেক আসামি গোলাপের বাবা জহুরুল হক মারা যান। পরবর্তীকালে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর বুধবার মামলার তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) নাছিমুল করিম হলি রায়ের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও একজন গৃহবধূ ন্যায় বিচার পেয়েছেন। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।