নারী কেলেঙ্কারীসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়ানোর দায়ে শেষ পর্যন্ত দলীয় পদ হারিয়েছেন রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানা ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমি। নৈতিক স্খলনের কারণে সাকিবুল ইসলাম রানাকে বহিষ্কার ও জাকির হোসেন অমিকে অব্যাহতি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় দলটির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তবে এই ব্যাপারে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আর সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন দাবি করেছেন, তিনি কিছুই জানেন না।
সূত্র মতে, বুধবার (২০ অক্টোবর) রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নৈতিক স্খলনের কারণে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার এবং রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমিকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। আর রানার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। একই সঙ্গে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, তদন্তাধীন অবস্থায় রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ ও বাগমারা উপজেলা ছাত্রলীগের যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তার কোনো বৈধতা নেই। তবে এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানার ৪ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। সেখানে বড় পদ পাইয়ে দিতে এক নারী নেত্রীকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি নিজেকে সব চিটারের দলের সর্দার বলেন রানা। সেইসঙ্গে ফাঁস হওয়া এক ভিডিও ক্লিপে সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমিকে এক নেতার চেম্বারে বসে ফেনসিডিল সেবন করতে দেখা যায়। এ নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। যার প্রেক্ষিতে এসব ঘটনার তদন্তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছিল। ওই তদন্ত কমিটি পক্ষ থেকে বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানা ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমিকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করেন। তার আগে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির গঠনকৃত তদন্ত কমিটির সদস্যরা রাজশাহীতে সরেজমিন ঘুরে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা দাখিল হলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক শেখ শামীম তুর্য, উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক আপন দাস ও সহ-সম্পাদক তানভীর আব্দুল্লাহ।
তারা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ‘ছাত্রলীগ কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি সমস্ত তথ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ১ নম্বর সহ-সভাপতি, ১ নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক যেসব কর্মকা-ে জড়িত তা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ও আদর্শের সঙ্গে চরম মাত্রায় সাংঘর্ষিক। এই অবস্থায় রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি ইউনিট এদের দ্বারা পরিচালিত হলে সংগঠনের ভাব-মূর্তি চরমভাবে বিনষ্ট হবে; যা আমাদের তদন্তে উঠে এসেছে। সুতরাং তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের জোর সুপারিশ করছি।’