গত বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করা কিলিয়ান এমবাপে চলতি মৌসুমেও আছেন দারুণ ছন্দে। কদিন আগে ব্যালন ডি’অর জেতা করিম বেনজেমাও বয়সকে তুড়ি মেরে ছুটছেন। বিশ্বকাপ মুকুট ধরে রাখার মিশনে আক্রমণভাগের এই দুই তারকার দিকে তাকিয়ে থাকবে ফ্রান্স। দলটির কোচ দিদিয়ে দেশম মূল লড়াই শুরুর আগে প্রশংসায় ভাসালেন দুই শিষ্যকে। ১৯৯৮ সালে খেলোয়াড় হিসাবে বিশ্বকাপ জেতা দেশম ২০১৮ সালে এই ট্রফির স্বাদ পেয়েছেন কোচ হিসাবে। তিনি ছাড়া মারিও জাগালো ও ফ্রেঞ্জ বেকেনবাওয়ারের কেবল এই দুই পরিচয়ে বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি আছে। এদের মধ্যে বেকেনবাওয়ার দুই বার করে খেলোয়াড় ও কোচ হিসাবে বিশ্বকাপ জিতেছেন। আগামী ২০ নভেম্বর দোহায় শুরু আসরে কোচ হিসাবে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে নামবেন দেশমও। ২২ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ‘ডি’ গ্রুপে পথচলা শুরু করবে ফ্রান্স। তাদের গ্রুপের বাকি দুই দল ডেনমার্ক ও তিউনিসিয়া। দেশমের মনে হচ্ছে, গ্রুপ পর্বেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। “আমরা জানি, ডেনমার্ক কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তারা খুবই শক্তিশালী এবং খুব আন্ডাররেটেড দল। তাদের নিয়ে মানুষ খুব একটা কথা বলতে চায় না, কিন্তু তাদের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য নির্ভর খেলোয়াড় আছে এবং তারা দল হিসেবে শক্তিশালী। তাদের গত ইউরোর পারফরম্যান্স এবং ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থাই বলবে, তাদের নিয়ে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।” “অস্ট্রেলিয়াকেও খাটো করে দেখতে চাই না। তারা বাছাইয়ের প্লে-অফে পেরুকে ছিটকে দিয়ে এসেছে। তিউনিসিয়া সম্পর্কে আমরা একটু বেশি জানি। কেননা, তাদের অনেক খেলোয়াড় ফ্রান্সের ক্লাবে খেলে। কোনো ম্যাচ যে সহজ হবে না, এ ব্যাপারে আমরা সচেতন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন প্রতিযোগিতা এবং আমাদের নিশ্চিত করতে হবে সব প্রতিপক্ষের চেয়ে যেন আমরা ভালো পারফরম করি।” পিএসজির সঙ্গে নানা ইস্যুতে টানাপোড়েন চললেও দলটির জার্সিতে ঠিকই আলো ছড়াচ্ছেন এমবাপে। দেশমের মনে হচ্ছে, কাতার বিশ্বকাপেও সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে মরিয়া থাকবেন তার তরুণ শিষ্য। “অসাধারণ খেলোয়াড়দের একজন এমবাপে-এই ধরণের খেলোয়াড় খুব কম পাওয়া যায়। দলে তাকে পাওয়া আনন্দের এবং আমরা ভাগ্যবান যে, সে ফরাসি। রাশিয়ায় আমাদের বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এবং আমি জানি, সে কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মানসিকতার। নিশ্চিতভাবে সে কাতার বিশ্বকাপে পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে উন্মুখ থাকবে।” “পরিসংখ্যানের বিচারে, খুব তরুণ বয়স থেকে সে অসাধারণ কিছু করে আসছে। এর বাইরে মাঠে তার মেধা সবাই জানে, মানুষ হিসেবেও সে খুবই দৃঢ় মানসিকতার ও বিচক্ষণ। ফুটবলে তার সামনে আরও অনেক দারুণ বছর অপেক্ষা করছে।” ‘সেক্সটেপ’ কাণ্ডে সাড়ে পাঁচ বছর পর ২০২০ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে ফ্রান্সে দলে ফেরেন বেনজেমা। গত মৌসুমের আলো ঝলমলে পারফরম্যান্স দিয়ে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন ৩৪ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার। দেশম মনে করেন, ক্যারিয়ারে শেষ দিকে এসে বেনজেমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ। “করিম বিশ্ব ফুটবলের সেরা ফরোয়ার্ডদের একজন এবং দারুণ ক্লিনিক্যাল। দলের বিল্ড-আপ প্লে-তেও সে সবসময় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, আক্রমণেও দারুণভাবে যুক্ত থাকে এবং আর এসব আমাদের জন্য খুব ভালো বিষয়।” “যেহেতু কয়েকটি বছর হারিয়ে গেছে (স্ক্যান্ডালের কারণে), এই বিশ্বকাপ করিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমাদের কোনো সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়, কিন্তু এটা হতে পারে তার শেষ বিশ্বকাপ। মাঠের বাইরেও সে বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ, যে তার অগাধ অভিজ্ঞতা তরুণদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ইচ্ছুক। সে এমন কেউ নয় যে যেকোনোভাবে পাদপ্রদীপের আলোয় থাকতে চায় বা কিংবা নেতা হতে চায়। বরং এর চেয়ে সে মাঠের উদাহরণ হতে চায়।”