ছাতক-দোয়ারাবাজারের উত্তর সুরমাবাসীর স্বপ্নের সুরমা ব্রিজের শুভ উদ্বোধন ২৯ অক্টোবর। যথাযথ সময়ে ব্রিজের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্নের প্রচেষ্টা চলছে দিন-রাত। র্খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দীর্ঘ ১৬ বছর অনেক বাধা-বিপত্তি, গড়িমসি ও চরাই-উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে বর্তমানে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
গত জুন মাসে ব্রিজটি উদ্বোধনের কথা থাকলেও সাম্প্রতিক শতাব্দির ভয়াবহ বন্যার প্রচণ্ড স্রােতে এ্যাপ্রোচ রোড ভেংগে পানিতে ভেসে যাওয়ায় ব্রিজটি চালু করা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ রয়েছে,অপরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্হা না রেখে এ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করায় ও কাজের মান অতিশয় নিম্নমানের কারণে বানের পানিতে ভেসে যায়।
ছাতকে সুরমা নদীর উপর সুরমা ব্রিজ নির্মাণ ছাড়াও গোবিন্দগঞ্জ ছাতক দোয়ারাবাজার সড়কে আরো ৯টি ব্রিজ উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সুরমা ব্রিজ, এ্যাপ্রোচ, টোলপ্লাজাসহ এই ১০টি ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে আড়ই’শ কোটি টাকার উপরে। স্থানীয়রা জানান, উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ, ছাতক সদর ও দোয়ারাবাজার আঞ্চলিক সড়কে গুরুত্বপূর্ণ এই ব্রিজগুলো নির্মাণের ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ছাড়াও ভারতের মেঘালয় অঞ্চলের সাথে বাণিজ্যেও একটি ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হবে শিল্পাঞ্চল ছাতক। এছাড়াও পরিবহন সুবিধের কারণে শিল্পাঞ্চল ছাতকে ভারী ও মাঝারী আকারের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার পাশাপাশি ছাতক ও দোয়ারাবাজার অঞ্চলে উৎপাদিত প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন প্রকারের শস্যাদি সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করে সংশ্লিষ্ট কৃষকরা আর্থিক লাভবান হবেন। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্র জানায়, সুরমা ব্রিজের উভয়পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যায় পড়ে সওজ। বাজারদরের চেয়ে তিনগুন বেশি ক্ষতিপূরণ দাবি করে ভূমি মালিকরা উচ্চ আদালতে ১৭টি মামলা দায়ের করেন। ফলে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ আটকে যায়। স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ভূমি মালিকদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে উচ্চ আদালতে মামলা উত্তোলনের (নো অবজেকশন ) ব্যবস্থা করেন। এরপর সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং,থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধের মাধ্যমে সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২৩ আগস্ট সুরমা ব্রিজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে বিএনপি জোট সরকার। সরকারের একটি বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০০৬ সালে জানুয়ারীতে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় ব্রিজটির কাজ। সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিলো তিন বছর। শুরু হওয়ার এক বছরের মধ্যে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজের চারটি স্তম্ভ (পিলার) নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর ব্রিজটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর প্রকল্পটি এডিপি ( বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) থেকে বাতিল করা হয়। ২০১০ সালে এ সেতুটির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য ৫১ কোটি টাকার একটি নতুন সংশোধিত প্রকল্প যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়। এই আবেদনের পরে আবার নতুন করে ২০২০ সালে ১১৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোধনের জন্য সওজ-এর প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ ( একনেকে ) ১১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সুরমা ব্রিজের পুন:নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করে। এরপর নেভিগেশন, এ্যাপ্রোচ, ভূমি অধিগ্রহণসহ দফায় দফায় কয়েকটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়।
সড়ক ও জনপথের উপসহকারী প্রকৌশলী মাসুম আহমদ সিদ্দিকী জানান,আগামী ২৯ অক্টোবর ছাতকের সুরমা ব্রিজসহ সারা দেশের ১০০টি নতুন ব্রিজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই লক্ষ্যে দ্রুত চলছে সুরমা ব্রিজের অসমাপ্ত আনুষঙ্গিক কাজ। এবারের কাজের মান অনেক ভালো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মুহিবুর রহমান মানিক এমপি তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন,এটি সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।ব্রিজটি নির্মাণের ফলে ছাতক-দোয়ারার যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পাশাপাশি এলাকায় প্রভুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে।