রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী গোলাম মুস্তাক শাহরিয়ারের মৃত্যুর ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বৃহৎ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। একদিকে রয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অন্যদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ইন্টার্নরা। এ পর্যন্ত দুই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই নগরীর রাজপাড়া থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে রোববার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রফিকুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) অজ্ঞাত ৩০০ জনকে অভিযুক্ত করে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর শনিবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার আবদুস সালামের নেতৃত্বে একটি টিম ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে পাল্টা অভিযোগ দাখিল করেন। পরে শনিবার রাতে উভয়পক্ষের অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। এখন আইনি প্রক্রিয়ায় পরবর্তীতে এ দুই মামলার অগ্রগতি হবে।
এদিকে, এ ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থানে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। রোববার (২৩ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীর অপসারণসহ ৯ দফা দাবি দ্রুত মানতে হবে, নয়তো দাবি আদায়ে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আর চিকিৎসকের ওপর হমলা এবং হাসপাতালে ভাংচুরে ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রামেক হাসপাতালের প্রধান ফটকে আন্দোলন করছেন রামেক ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যেই টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। আর ইন্টার্নদের কর্মবিরতির কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনডোর এবং আউটডোরে চিকিৎসাসেবা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। এই দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খেসারত দিচ্ছেন রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা। যেন এদের দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই।
রাবি শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবিগুলো হচ্ছে- মৃত শাহরিয়ারের মৃতদেহের পাশে অবস্থানকালে তার সহপাঠীদের ওপর নৃশংস হামলা হত্যাচেষ্টা এবং শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় এবং আনসারদের অতিদ্রুত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং তাদের প্রত্যেককেই তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে হবে। আর রামেক হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানীর অসংলগ্ন আচরণ ও প্রত্যক্ষ মদদে বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটে এমন অভিযোগ তুলে বলেন, এই পরিচালককে অপসারণ করতে হবে। সেই সাথে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও জরুরি মুহূর্তে ফর্মালিটিজের নামে সাধারণ মানুষের হয়রানি, চাঁদাবাজি এবং ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ বন্ধ করতে হবে। একই সাথে রামেক হাসপাতালের বিদ্যমান বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এছাড়াও ডাক্তারদের দোষ ওয়ার্ডবয়ের ওপর আর ওয়ার্ডবয়দের দোষ ডাক্তারদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার অনাকাঙ্খিত বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং অসংলগ্ন কথাবার্তার তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ইন্টার্ন ডাক্তারদের স্বেচ্ছাচারীতা, রোগী এবং রোগীর অভিভাবকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ জানাতে গেলে অভিবাবকদের ওপর অস্ত্রোপাচার সামগ্রী দিয়ে আক্রমণের বদভ্যাস পরিহার করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৮ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে রাবির হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলায় সহপাঠীর মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগে হাসপাতাল ভাংচুর করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে হাসপাতালে ভাংচুরের অভিযোগে কর্মবিরতিতে যায় ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।