দেশের মোট ৬৪ জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া ৬১ টি জেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৭ অক্টোবর। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও অন্য একটি জেলা পরিষদের নির্বাচনের আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেখানে নির্বাচন হয় নি। অন্যদিকে ৫৯ টি জেলা পরিষদের নির্বাচনে ২৫ টি তেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে ফেনী ও ভোলায় চেয়ারম্যানসহ সব পদে একক প্রার্থী থাকায় বিনা ভোটেই সবাই নির্বাচিত হয়েছেন। বলা-বাহুল্য নির্বাচিত সবাই ক্ষমতাশীল দলের নেতা কর্মী। বিনা ভোটে নির্বাচিত শুধু অনাকাঙ্কিত নয়, অস্বাভাবিকও। জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটাররা স্থানীয় সরকারের তৃনমূল কাঠামো ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা। অনেকটা পাকিস্তান আমলের সামরিক শাসক আইয়ুব খান প্রবর্তিত মৌলিক গণতন্ত্রের মতো।
এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচন দেশে দ্বিতীয় বারের মতো হলো। তবে দলিও ব্যানারে না হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয় মননোয়ন দিয়ে রাজনৈতিক প্রলেপ দিয়েছে। দু’টি জেলা পরিষদ নির্বাচনই বিরোধী দলগুলোর অধিকাংশরাই বর্জন করেছে। ফলাফলে দেখা গেছে, ৫৯ টি জেলা পরিষদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জিতেছেন ৪৯ টি তে। ছ’ টি তে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীরা এবং জাতীয় পাটির একজন ও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হলেও কোথাও কোথাও ভোট কেনাবেচার অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনে টাকা লেনদেন দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪ নং ওয়ার্ড থেকে জয়ী প্রার্থী মোঃ সুমন সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনের আগের রাতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা বান্ডিল ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগে অন্তত: সাত জন ইউপি সদস্য করলেও তা অস্বীকার করেছেন সুমন সরকার। বলেছেন প্রতিপক্ষ তার নামে মিথ্যে রটনা করছে। আরো অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে, টাকার বান্ডিল গুলো জাল টাকার। অভিযোগকারীরা তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন বিষয়টি প্রার্থীকে জানালে তিনি উল্টো জাল টাকা সংরক্ষণের জন্য ভোটারকে পুলিশে ধরিয়ে দেবার হুমকি দেন।
অন্যদিকে মেহেরপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের (গাংনী উপজেলার) মফিজুল ইসলাম ও হাফিজুর রহমান ভোটে জিততে ভোটারদের এক লাখ টাকা করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এখানে মোট ভোটার ছিলেন ১৩২জন। ভোট পাওয়ার জন্য ভোটারদের টাকা দিলেও তারা নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন নি। ফলে দু’জনই নির্বাচনের পর ভোটারদের কাছে টাকা চাইছেন, না দিলে সমস্যা হবে বলে হুমকিও দিচ্ছেন। তাই ভোটের বিনিময়ে টাকার নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে গেছে। এবং ইউপি সদস্যদের মান সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট দু’ প্রার্থী অভিযোগ অস্বীকার করছেন। প্রতিপক্ষের কারসাজি বলে অভিহিত করছেন।
ঘটনা যাই হোক, বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত সব জায়গায় মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা শোনা যায়। ভোট কেনাবেচার অভিযোগও পুরনো। নির্বাচন কমিশনে যে নির্বাচনী ব্যয় জমা দেওয়া হয় তা বানোয়াট। কাজেই এ বাপটারে ভোটার ও প্রার্থীদের সচেতন করতে আইনি ব্যবস্থা জরুরি। যাতে এ পথে কেউ আগামীতে না এগোয়।