সুলভ ও নিরাপদ বাহন হিসাবে মানুষ রেলভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু দেশে লোকাল ট্রেনের প্রতি কর্তৃপক্ষের অবহেলা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। অথচ ট্রেনযাত্রীদের বড় অংশই লোকাল ট্রেনের। জানা গেছে, লোকসানের লাগাম টানতে লোকাল, মেইল, কমিউটারসহ ৯২টি ট্রেন এবং ১১১টি স্টেশন পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন এসব ট্রেন ও স্টেশন বন্ধ থাকায় স্থানীয় যাত্রীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। বন্ধগুলো চালুর উদ্যোগ না থাকলেও নতুন স্টেশন নির্মাণ, ট্রেন উদ্বোধন অব্যাহত রয়েছে। বন্ধ স্টেশনগুলো রেলের খাতায় ‘অলাভজনক’ হিসাবে চিহ্নিত। রেলকে লাভজনক ও দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য বহু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে রেলকে লাভজনক ও দুর্নীতিমুক্ত করা যায়নি। প্রশ্ন হলো-রেলের উন্নয়নে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হলেও আয়ের চেয়ে এ প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বেশি কেন? এখন বন্ধ স্টেশনগুলো আধুনিক রেলের গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। লোকাল ট্রেনের তুলনায় আন্তঃনগর ট্রেনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও এ ট্রেনে টিকিটধারীর চেয়ে বিনা টিকিটে ভ্রমণকারী যাত্রীর সংখ্যা বেশি। লাগামহীন চুরি ও দুর্নীতি ছাড়াও নানা ধরনের অব্যবস্থাপনায় নিমজ্জিত রেল বিভাগের এ নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বস্তুত রেল কর্তৃপক্ষ গণমানুষের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। লোকাল ট্রেন ও স্টেশনগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্থানীয় নিম্ন-আয়ের মানুষ। সাধারণ মানুষ আশা করে, রেলের লাগামহীন দুর্নীতি রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রেন ও স্টেশনগুলো চালু করা হবে। লোকাল ট্রেনব্যবস্থার উন্নতি হলে রাজধানীর আশপাশের শহরে বসবাসকারী মানুষ সহজেই রাজধানীতে এসে কাজ শেষে বাসস্থানে ফিরে যেতে পারবে। এতে রাজধানীর ওপর জনসংখ্যার চাপ কমবে। একই কথা অন্যান্য নগরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। একজন নিম্ন-আয়ের ব্যক্তির রোজগারের অর্থে রাজধানী কিংবা অন্যান্য নগর এলাকায় পরিবারের ব্যয়নির্বাহ করা অত্যন্ত কঠিন। লোকাল ট্রেনব্যবস্থার উন্নতি হলে নিম্ন-আয়ের মানুষ কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ পাবে। রেল সাধারণ মানুষের বাহন, এটা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে সরকার ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত লোকাল ট্রেনের ওপর যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া। বিপুল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করা সত্ত্বেও এ প্রতিষ্ঠানকে কেন লোকসান গুনতে হচ্ছে, এর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। রেলকে সত্যিকার অর্থে যাত্রীবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।