চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সোমবার আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসন, বন অধিদপ্তর, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আলোচনা সভার আয়োজন করেন। গড়দুয়ারাস্হ কান্তার আলী চৌধুরীহাট সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা রিচার্স সেন্টার চত্বরে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহিদুল আলম।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন হালদা দেশের জাতীয় সম্পদ। তাই সরকার এই নদীকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেস ঘোষণা করেছেন। এই নদীর মাছ, জীব বৈচিত্র্য ও ডলফিন নদী দূষন রক্ষা করা প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব। এজন্য সকলকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে এগিয়ে এসে কাজ করতে হবে। আর যারা হালদা নিয়ে গবেষণা করে তাদের প্রত্যেক গবেষককে এক জায়গায় এসে নদীর সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ বের করতে হবে। গবেষকেরা যদি ভিন্ন ভিন্ন মতামত প্রদান করেন তাহলে হালদাকে বাচিয়ে রাখা কস্টকর হবে।
অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান, হালদা রিচার্স সেন্টারের সমন্বয়ক ও গবেষক অধ্যাপক ডঃ মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি তাঁর গবেষণায় হালদা নদী, জীব বৈচিত্র্য ও মিঠা পানির ডলফিন রক্ষার স্বার্থে নদীর সংযোগ খালে নির্মিত সুইস গেইট ও ভুজপুরে স্হাপিত রাবারডেম অপসারনের পক্ষে যুক্তি উত্থাপন করেন। তিনি এই নদীকে পৃথিবীর এক বিস্ময়কর নদী হিসাবে আখ্যায়িত করেন।
তাঁর সুইস গেইট ও রাবার ডেম অপসারণ বিষয়ে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার দুই ইউ চেয়ারম্যান যথাক্রমে গড়দুয়ারার সরোয়ার মোরশেদ তালুকদার ও পশ্চিম গুজরা ইউ পি চেয়ারম্যান লায়ন শাহাবুদ্দিন আরিফ বলেন সুইস ও রাবারডেম অপসারন করলে শুস্ক মৌসুমে চাষাবাদ ব্যহত হবে। বর্ষা মৌসুমে হালদা নদীর ঢল ও জোয়ারের পানি লোকালয়ে ডুকে ফসলী জমি চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে উল্লেখ করে, এগুলো অপসারন না করে বরং আধুনিকায়ন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন চাষাবাদের স্বার্থে। তাছাড়া হালদা নিয়ে জনে জনে ভিন্ন ভিন্ন গবেষণা না করে যেসব গবেষক হালদা নিয়ে গবেষণা করেন তাদেরকে একই জায়গায় এসে গবেষণা করার প্রস্তাব করেন। এতে হালদা নদীর সমস্যা সমাধান সহজ হবে বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুস সামাদ সিকদার, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ব্যবস্হাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদুল আলম, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল আলম বাশেক। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন হাটহাজারী প্রেস ক্লাব সভাপতি কেশব কুমার বড়ুয়া। রাউজান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়াজ মোর্শেদ ও বন বিভাগের বন্যপ্রানী ব্যবস্হাপনা ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষন কর্মকর্তা দীপান্বিত ভট্টাচার্য এর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন ও গীতা থেকে পাঠ করেন যথাক্রমে মাওলানা মোহাম্মদ মুছা ও ছোটন দাশ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আই ডি এফ এর কর্মকর্তা মোহাম্মাদ শাহ আলম ও ডিম আহরনকারী কামাল উদ্দীন সওদাগর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গুমানমর্দ্দন, নাঙ্গলমোড়া ও উত্তর মার্দাশা ইউ পি চেয়ারম্যান যথাক্রমে মুজিবুর রহমান, হারুন অর রশীদ, মোহাম্মদ শাহেদুল আলম। রাউজানের বিনাজুরী ও গহিরা ইউ পি চেয়ারম্যান যথাক্রমে রবীন্দ্র লাল চৌধুরী ও নূরুল আবছার
সহ ডিম আহরনকারী রেনু পোনা উৎপাদনকারী ইউ পি সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক মন্ডলী, শিক্ষা ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন।
সভাপতির বক্তব্যে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহিদুল আলম বলেন হালদা নদীতে মাছের মজুদ বৃদ্ধি, জীব বৈচিত্র্য, ডলফিন ও নদী দূষন রোধ কল্পে সকল ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি হালদা নদীর রক্ষায় গনমাধ্যম কর্মীও জনপ্রতিনিধি, আই ডিএফ, নৌ পুলিশ, গ্রাম পুলিশ ও আনসারদের ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে সকালের সহযোগিতা কামনা করেন।