কুড়িগামের রৌমারী উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেট আবদুল হাই এবার ধরা খেলেন চাঁদাবাজীর মামলায়। তার বিরুদ্ধে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নাম ভাঙ্গিয়ে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. সুমন আলি স্ব-প্রণোদিত হয়ে একটি মিস মামলা রুজু করেছেন। একই সঙ্গে এ ঘটনার তদন্তের জন্য রংপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপারকে আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।
রৌমারী আমলি আদালতের পেশকার আবদুস ছামাদ জানান, কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত রৌমারীর বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন আলির আদালতে সোমবার (২৪ অক্টোবর) বিশেষ নির্দেশনার প্রেক্ষিতে নথিপত্র উপস্থাপন করা হয়। এ সময় তিনটি মিডিয়ায় প্রকাশিত রিপোর্ট উল্লেখ করে বলা হয় চলতি মাসের ৫ অক্টোবর রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেট আবদুল হাই নিজেকে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিচয়ে রৌমারী থানা মোড় এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসান। সেখানে অবস্থিত বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডার’র মালিক মিঠু মিয়া ও ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক সুজন মিয়াকে বিভিন্ন অব্যবস্থার কথা বলে দুই বছরের জেল ও দোকান সিলগালা করার ভয় দেখান। এতে ভীত হয়ে মিঠু মিয়া বিকাশে (০১৯৩৩২১২১২০) ৩৫ হাজার টাকা ও সুজন মিয়া ৩০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এ সময় তার আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় স্থানীয়রা তাকে আটক করলে রৌমারী সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য রবিউল করিম ও ২নং ওয়ার্ড সদস্য রবিউল ইসলাম রানা টাকা ফেরৎ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের জিম্মায় আবদুল হাইকে ছাড়িয়ে নেন। এময় উপস্থিত জনতা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবদুল হাই দুই দোকান থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন।
তিনি আরও জানান, বিজ্ঞ বিচারক পেনাল কোডের ১৮৯৮ এর ১৯০(১)(সি) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রকাশিত সংবাদে বর্ণিত ঘটনার সত্যতা অনুসন্ধানের জন্য এ মামলাটি আনয়ন করে পুলিশ সুপার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), রংপুরকে নির্দেশ প্রদান করেন। মামলা নং-মিস কেস-৩০/২২ (রৌ:)। এ মামলায় অভিযুক্ত আবদুল হাই’র বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩৮৫, ৪১৭, ৪১৯ ও ৪২০ ধারায় অভিযোগ আনয়ন করা হয়।
চলতি মাসের ৫ অক্টোবর রৌমারী উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেট আবদুল হাই নিজেকে কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরিচয়ে রৌমারী শহরের থানামোড় এলাকায় দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসান। এ সময় তিনি বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারে দোকান অপরিষ্কার ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ত্রুটির কথা বলে কর্মচারীদেরকে দোকান বন্ধ করতে বাধ্য করান। এছাড়াও দোকান সিলগালা ও দুই বছর জেল জরিমানার ভয়ভীতি দেখান। এ সময় ৩৫ হাজার টাকা দাবী করা হলে দোকান মালিক টাকা দিতে চাইলে তিনি ক্যাশ টাকা না নিয়ে স্থানীয় একটি বিকাশের দোকান থেকে তার দেয়া ০১৯৩৩২১২১২০ নম্বরে ৩৫ হাজার টাকা নেন। এরপর উপজেলার সামনে ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভান্ডারে একই অভিযোগ এনে ৫০ হাজার টাকা দাবী করেন। দোকান মালিক সুজন মিয়া তাকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে শান্ত করান। পরে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে আবদুল হাইকে জনতা আটক করে। পরে ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরৎ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে স্থানীয় দুই ইউপি সদস্যের জিম্মায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূরণ আখতারকে (০১৭৯৯৭৪৫০৯) নম্বরে একাধিকবার মোবাইল করে এবং মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েও তার মতামত পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ঘটনাটি আমি অবহিত হওয়ার পর পরই রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। এখনও প্রতিবেদন আমার হাতে পৌঁছেনি। তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।