নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির বিরুদ্ধে প্রতিদিন লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয়েছে। সমিতির নামে সিন্ডিকেট তৈরি করে জমির ক্রেতা বিক্রেতাদের জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এরা। তাদের এ অনৈতিক কাজ বছরের পর বছর চলে আসলেও এর কোন সুরাহার উদ্যোগ নেয়নি কেউ।
অভিযোগ করা হয়েছে যে, সরকারি লাইসেন্সধারি দলিল লেখকরা দলিলের প্রতি পৃষ্ঠা লেখার জন্য নির্ধারিত হারে ফি পাবেন। কিন্তু যে কোন লেখকই দলিল লেখুক না কেন প্রতিটি দলিলের জন্য সমিতির নামে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা না দিলে সে দলিল রেজিষ্ট্রি হয়না। এজন্য প্রতিটি দলিলের শেষ পাতায় সমিতির চাঁদা পরিশোধের একটি সাংকেতিক চিহ্ন দেয়া হয়। এভাবে সমিতির নামে আদায় করা কোটি টাকা সমিতির সদস্যদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হয়। অনেক দলিল লেখক কোন দলিল না লিখেও প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা ঘরে বসেই পেয়ে যান। বছর শেষে সমিতির সদস্যদের নিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে ফিবছর কক্সবাজারে বিনামূল্যে দুসপ্তাহের ট্যুর দেয়া হয়।
উপজেলা সদরের মৃত তাহের আলী মন্ডলের ছেলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজাদ রহমান অভিযোগ করেন যে, তারা মোট ২৯ জন গত ১৮ অক্টোবর মহাদেবপুর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে মোট ৭টি দলিলে ৩ একর ২৭ শতক জমি রেজিষ্ট্রি করেন। জমির মালিকের কাছ থেকে ১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকায় সে জমি কিনেন। কিন্তু মহাদেবপুর মৌজার জমির সরকারি দাম বেশি নির্ধারণ করা থাকায় দলিল করতে হয়েছে ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকার। ওই টাকার উপর সরকারি ট্যাক্স, ভ্যাট দিয়েছেন ১৯ লক্ষ ৩ হাজার ৬০ টাকা। দলিল লেখা প্রভৃতির খরচ দিয়েছেন ৪৫ হাজার টাকা। এরপরও সমিতির নামে চাঁদা দিতে হয়েছে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। সমিতির চাঁদা পরিশোধ না করা পর্যন্ত দলিল রেজিষ্ট্রি হবেনা বলে জানালে তারা সে টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হন। পরে জানতে পারেন ওই চাঁদা নেয়া সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনী।
আজাদ রহমান এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
বিষয়টি জানতে বৃহস্পতিবার দুপুরে মহাদেবপুর দলিল লেখক সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলফোনে ওই ৭টি দলিলের লেখক নুরুল ইসলাম সমিতির নামে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা গ্রহণের কথা স্বীকার করে জানান, সমিতির নিয়মানুযায়ী তিনি ওই চাঁদার টাকা গ্রহণ করে সমিতিতে জমা দিয়েছেন। এত বেশি টাকা চাঁদা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি দলিলের জন্য চাঁদার নির্ধারিত রেট রয়েছে। তবে উপজেলার ১০ ইউপি চেয়ারম্যান, বড় কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতা ও সাংবাদিকদের জন্য কিছুটা ছাড় দেয়া হয়।
সরকারি দলের প্রথম সারির একজন নেতা জানান, তিনিসহ দুইজন নেতা ওই ৭টি দলিলের জন্য দাবি করা ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা চাঁদার পরিমাণ কিছু কমানোর অনুরোধ জানালেও সমিতির নেতারা তা মানেননি।
জানতে চাইলে মহাদেবপুর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি কাওসার আলী ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন এ বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নেয়া হয়েছে কিনা তা অফিসে গিয়ে কাগজপত্র দেখার পর বলতে পারবেন বলে জানান।
উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রার আবদুর রশিদ মন্ডল জানান, তিনি মূলত: আত্রাই উপজেলার দায়িত্বে রয়েছেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সপ্তাহে দুদিন মঙ্গলবার ও বুধবার মহাদেবপুরে অফিস করেন। সমিতির নামে চাঁদা নেয়া হয় কিনা তা তিনি জানেন না বলে জানান। তবে চাঁদা নিয়ে থাকলে তা মোটেও ভাল কাজ নয়। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব তার কিনা তারও কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান লিখিত অভিযোগ পাবার কথা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, বিষয়টি দু:খজনক। এরকম চাঁদাবাজি হয়ে থাকলে অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।