দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন অনেক বিদেশি নাগরিক। তাদের শনাক্ত করে আয়কর আদায় বৃদ্ধি এবং অর্থ পাঁচার রোধে সম্প্রতি একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী। জানা যায়, সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নে যৌথভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে (বিডা) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। উদ্বেগজনক হলো, এ মুহূর্তে দেশে কতজন বিদেশি নাগরিক বৈধ বা অবৈধভাবে কাজ করছেন, এর প্রকৃত পরিসংখ্যান সরকারি ও বেসরকারি কোনো পর্যায়েই সুনির্দিষ্টভাবে নেই। তবে টিআইবির এক গবেষণা অনুযায়ী, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, আন্তর্জাতিক এনজিও, তৈরি পোশাকশিল্প, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁর মতো খাতে কাজ করছেন অন্তত আড়াই লাখ বিদেশি নাগরিক, যারা প্রতিবছর অবৈধভাবে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাঁচার করছেন। উপরন্তু অনেকে কর ফাঁকি দিচ্ছেন; আবার অনেকে অবৈধভাবে এদেশে কাজ করে কোনো কর না দিয়েই টাকা নিয়ে যাচ্ছেন, যে কারণে প্রতিবছর সরকার প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। বিষয়টি কোনোমতেই মেনে নেওয়া যায় না। বস্তুত বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিকদের নিয়োগ ও চাকরি করার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব যেমন রয়েছে; তেমনি তা বাস্তবায়নে নির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ না থাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশিরা তাদের প্রকৃত বেতন গোপন করার সুযোগ পাঁচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগ কর্তৃপক্ষ বিদেশি নাগরিকদের প্রকৃত বেতনের একটি অংশ বৈধভাবে দিলেও আয়কর ফাঁকি দিতে এর সিংহভাগই অবৈধভাবে নগদে দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া অবৈধভাবে কর্মরত কর্মীদের হাতখরচ, আবাসন, পরিবহণ ও অন্যান্য সুবিধাসহ পুরো বেতনই নাকি নগদ অথবা অন্য কোনো দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়ে থাকে। এটি আমাদের প্রচলিত আইন ও নীতি পরিপন্থিই নয়; একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকর। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। আয়কর প্রদান নতুন কোনো বিষয় নয়। প্রাচীনকাল থেকেই দেশে দেশে বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স প্রদানের বাধ্যবাধকতা চালু রয়েছে। মূলত কর হিসাবে প্রদানকৃত অর্থ একটি দেশের উন্নয়নে ব্যয় হয়। তবে এদেশে কর্মরত বিদেশিরা প্রচলিত আইনের ও নিয়মকানুনের বাইরে নন-এ কথা যেমন সত্য, তেমনি কর আদায়ের নামে তারা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেটি দেখাও জরুরি। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে প্রাপ্য কর আদায়ের পাশাপাশি তাদের মাধ্যমে যাতে টাকা পাঁচার হতে না পারে, এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে।