৪ মাস ধরে বিদ্যালয়ে না গিয়েও নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন নেত্রকোনার দুর্গাপুরের মহারাজা কুমুদচন্দ্র মেমোরিয়াল পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এস.এম আলমগীর হাসান। গতকাল খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
১৯১৮ সালে এ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়, ১৯৮৫ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয়। দীর্ঘদিনের সুনাম রয়েছে এই বিদ্যালয়টির। কিন্তু এই সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলমগীর হাসানের টালবাহানা এবং অনিয়মের কারনে। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বদলি হয়ে চলে যাওয়ায় ২০১৮ সালে সহকারী শিক্ষক থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অনিয়ম,অবহেলা শুরু হয় বিদ্যালয়টিতে। বর্তমানে প্রায় পঙ্গু হয়ে গেছে দুর্গাপুরের সনামধন্য এই সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, এই নামকরা প্রতিষ্ঠানে আইসিটি ল্যাব নেই, বিজ্ঞানাগার নেই। এইসব সরঞ্জাম কেনার জন্য প্রতিবছর সরকারী বাজেট বরাদ্ধ থাকলেও এ খাতে খরচ করা হয়না। সরকারী বাজেটের ব্যয় শুধু বিল ভাউচারেই সীমাবদ্ধ। সরকারী বাজেটের কোন দৃশ্যমান আলামত নেই। এ ছাড়াও পরীক্ষা পরিচালনায় তিনি খুবই নিন্মমানের কাগজ সরবরাহ করেন। শিক্ষকগন কিছু বললে শোকজ করার হুমকি দেন। ইতি মধ্যেই তিনি দুইজন শিক্ষকের বেতন ফরোওয়ার্ড করেননি যার ফলে বিগত দুমাস যাবৎ তাদের বেতন উত্তোলন বন্ধছিল। পরবর্তীতে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর তিনি দু'জন শিক্ষকের বেতন ফরোয়ার্ড করেন। বর্তমানে স্কুলে না গিয়েও ৪ মাস ধরে বেতন তুলছেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যয়নপত্র, প্রশংসাপত্র, মার্কসিট সার্টিফিকেট সহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজ নিতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। মূলত স্কুলের প্রশাসনিক কাজ বন্ধ আছে। বিদ্যালয়টি নিয়মিত তদারকি না থাকায় স্কুল মাঠে থাকা শহীদ মিনারটি ভেঙে পড়েছে ও ক্লাস রুম এলোমেলো অপরিষ্কার নোংরা, ক্লাস রুমের ফ্যান নেই যেগুলো আছে সেগুলোর পাকাগুলো বেঁকানো। শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ ভাঙ্গা। অনেক ক্লাস রুমের টিনের চাল ভেঙে ভিতর থেকেই দেখাযায় আকাশ। ক্লাস রুমগুলোর নেই কোনো দরজা জানালা। স্কুল মাঠে গরু-ছাগল চারণ করা হয়ে থাকে। স্কুলটিতে প্রবেশ করলেই মনে হয় কোনো ভূতুড়ে বাড়ি।
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের নিয়ে বাজে পোষ্ট দেন যা দেখে তারা খুবই মর্মাহত হন। এতে করে তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। সিনিয়র শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকগণের ব্যাপারে তিনি অপবাদ, কটূক্তি ও গালিগালাজ করেন। তারা স্বস্তিতে ক্লাস নিতে পারছেন না। সবচেয়ে বেশী সমস্যা হচ্ছে তিনি ৪ মাস ধরে স্কুলে অনুপ¯ি’ত যে কারণে অর্থনৈতিক সংকট এই স্কুলে চরম আকার ধারণ করেছে। তার অসদাচরণ ও গালিগালাজের জন্য ভাড়া বাসা থেকে ঘরের মালিক বের করে দিয়েছেন। তিনি স্কুলের সহকারি শিক্ষক, অবিভাববকবৃন্দ, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক কাউকেই তোয়াক্কা করেন না।
শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ ও পরীক্ষার খাতায় নাম্বার কম দেয়া,বিভিন্ন অযুহাতে অতিরিক্ত ফি আদায়, অবহেলায় স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাওয়া ও বাৎসরিক বরাদ্ধ নয় ছয় করে অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এস.এম আলমগীর হাসানের অপসারণের দাবীতে সম্প্রতি মানববন্ধন করেছেন ঐ স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এর আগেও বেশ কয়েক বার ¯’ানীয় সচেতনমহল সহ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও আলোচনায় বসেছেন। তবে গেল ২৮ শে জুন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের দাবী মেনে নিয়ে এই স্কুল থেকে সেচ্ছায় পদত্যাগ করে অন্যস্থানে চলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতির ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে সরে যাননি। এতে সেখানে নতুন করে প্রধান শিক্ষক আসতে পারছেন না। একজন দায়িত্বশীল প্রধান শিক্ষক না থাকায় যেমন স্কুলের পড়াশোনার মান খারাপ হচ্ছে পাশাপাশি স্কুলের দীর্ঘদিনের সুনামও নস্ট হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে ময়মনসিংহ বিভাগের ডিডি স্কুলে উপ¯ি’ত হয়ে এ সকল অনিয়মের তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছেন এরও এর কোন সুরাহাই হচ্ছেনা,তাঁর খুটির জোর কোথায় ?
১১ অক্টোবর শুক্রবার ওইসব অনিয়ম ও শিক্ষকদের বেতন বন্ধের বিষয়ে মুঠোফোনে বক্তব্য নিতে চাইলে স্থানীয় এক সাংবাদিক'কে কুত্তার বাচ্ছাা বলে গালি দেয় ও র্যাবের হাতে তুলে দেওয়ার হুমকি দেয় এ শিক্ষক।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলমগীর হাসান অত্র বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় আশানুরূপ শিক্ষার পরিবেশ পা”েছ না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে টালবাহানা করে আসছেন বলে জানায় ¯’ানীয়রা। এতে সরকারি এ প্রতিষ্ঠান থেকে অভিভাবকরা মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হ”েছন। প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের সমস্ত কাজের হযবরল অব¯’া। এ রকম দুরব¯’া থেকে উত্তরণের জন্য এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তার প্রত্যাহারের দাবি করেন এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনি”ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন,অনেকদিন ধরেই আমাদের টিফিন দেওয়া হয়না। আমাদের প্রধান শিক্ষক না থাকায় আমরা ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পা”িছ না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাদের সাথে কেমন আচরণ করতেন জানতে চাইলে ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, স্যার আমাদের সাথে খুব বাজে আচরণ করতেন। কখনও যদি স্যারের অফিসের সামনে যেতাম অনেক বকাঝকা করতো। স্যার অনেক বাজে লোক ছিলো।
অসংখ্য শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দায়িত্বে থাকা আলমগীর হাসান শিক্ষার্থীদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করেণ, শিক্ষার্থীদের মারধরও করেন। যেসব ভাষায় গালাগাল করেণ তা বলার মতো না। এই বিদ্যালয়ে আমাদের সন্তানের পড়াশোনার ভালো পরিবেশ দেখছি না। শুধু তাই নয় আমরা অভিভাবকরা কখনও কখনও স্কুলে গেলে আমাদের সাথেও খারাপ আচরণ করেণ তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এস.এম আলমগীর হাসান'কে ফোনে পাওয়াযায়নি।