বাংলাদেশে সড়ক অবকাঠামো উন্নত হয়েছে। দেশে যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু দু:খ জনক হলেও সত্য সড়ক পথ এখন মৃত্যু ফাঁদ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন ১৪ জন মানুষ মারা গেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সর্বশেষ ২০১৩ সালে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড হেলথ ব্যাটিং অনুসারে ১৮৩ দেশের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হারে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮ তম (মৃত্যুর হার ‘এক লক্ষে ১৬.৭৪ জন), ২০১৭ সালে ছিল ১০৩ তম (মৃত্যুর হার ‘এক লক্ষে ১৫৮৫)। পাশাপাশি পুলিশ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ সালে ২৫১৩, ২০১৮ সালে ৪১৩৮, ২০১৯ সালে ৩৯১৮, ২০২০ সালে করোনার জন্য লক ডাউন থাকায় মৃত্যুর হার কিছুটা কমলেও ২০২১ সালে বেড়ে ৫০৮৪ জন হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে ২২ অক্টোবর পালিত হলো জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি’। সামগ্রিক বিবেচনায় প্রতিপাদ্য বিষয়টি যথার্থ। ২০১৭ সাল থেকে দিবসটি সরকারি ভাবে পালন করা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনার জন্য একক ভাবে কাউকে দায়ী করা ঠিক নয়। কারণ সড়কে চলতে সবারই সচেতনতা প্রয়োজন। মহাসড়কে ছোট বড় সব ধরনের যানবাহন এক সাথে চলাচলের কারণে ছোট গাড়ির সাথে বড় গাড়ির সংঘর্ষ হলে ছোট গাড়ির যাত্রীরা মৃত্যু বরন করে। অন্যদিকে বড় বড় গাড়িগুলো একে ওপরের সাথে প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে ওভার টেকিং করার সময় দুর্ঘটনা ঘটে এবং প্রানহানী ঘটে। এ ছাড়া এখন সারা দেশে মটর সাইকেলের সংখ্যা বেড়ে গেছে এবং মটর সাইকেলের চালকরা অপেক্ষাকৃত অল্প বয়সী হওয়ায় তারা দ্রুত চালায় এবং ওভার টেকিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ছোট গাড়ির বড় ঝুঁকি হিসেবে আজ সারা দেশের সড়ক দূর্ঘটনার শীর্ষে অবস্থান করছে। অন্যদিকে পরিবহন মালিকরা তাদের যানের ফিটনেস পরীক্ষায় আগ্রহী নয়, আবার ওভার লোডিং করতেও তারা উৎসাহ দেন। ফলে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। অন্যদিকে পথচারীরা নির্ধারিত ফুটপাতে না হেটে সড়কের পাশ দিয়ে কানে মোবাইল দিয়ে পথে হাঁটেন। আসে পাশের পরিবেশ লক্ষ্য করেন না। ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পথচারীরা।আর সামগ্রিক ভাবে ট্রাফিক সিগন্যাল না মানায় প্রবণতা সবার মাঝেই যেন ব্যধিগ্রস্থ। কাজেই সড়ক পথে চলার আইন সবার জন্য মেনে চলা অপরিহার্য্য।
সরকার ছাত্রদের আন্দোলন পরিপেক্ষিতে ২০১৮ সালে সড়ক নিরাপদ আইন পাশ করে। কিন্তু পরিবহন মালিক শ্রমিকের চাপের ফলে সেই আইনের বিধি উপবিধি প্রণয়ন এখন পর্যন্ত প্রণয়ন করা সম্ভব হয় নি। সড়ক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সরকারের গাফিলতি রয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন। দেশে এখন মহামারি করোনায় প্রতিদিন পাঁচ জন করে মানুষ মারা যায়। এ ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার যথেষ্ট আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের কারণে এখন করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু সড়কে প্রতিদিন ১৪ জন দুর্ঘটনায় মারা গেলেও এ ক্ষেত্রে সরকারের নির্লিপ্ততা ও সংশ্লিষ্টদের অসচেতনতা দূর করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজেই সংশ্লিষ্ট সবার আইন মেনে নিজের নিরাপত্তা বিধানের প্রতি সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর তা যত দ্রুত হবে ততোই মঙ্গল।