গত ২৪ অক্টোবর সিত্রাংয়ের আঘাতে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ডুবে ও নৌযান ডুবে ভোলা, সিরাজগঞ্জ, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঝালকাঠিতে ১৬ জন, গাছ চাপায় নড়াইল, বরগুনা, শরীয়তপুর, ভোলা, গোপালগঞ্জ, নোয়াখালী, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ায় ১৪ জন, ঝড়ের সময় সড়ক দুর্ঘটনা বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে ৪ জন ও ঘর চাপা পড়ে গাজীপুরে একজন শিশুসহ মোট ৩৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তবে সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে বড় কোনো বিপর্যয়ের খবর পাওয়া যায়নি। অন্য দিকে ঘুর্নি ঝড়ের প্রভাবে দেশের ৪১৯ টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ইউনিয়নে আনুমানিক ১০ হাজার ঘড় বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৬ হাজার হেক্টর ফসলের জমি নষ্ট হয়েছে এবং এক হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ লাখ পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ডের গ্রাহক। আশার কথা ২৬ অক্টোবরের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া-বিদরা আগে দেশের ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাষ যথাযথ ভাবে দিতে পারলেও এবার তাদের পূর্বাভাস নিয়ে গড়মিলের প্রশ্ন উঠেছে। ঠিক কখন কোন অঞ্চলে আঘাত হানবে সে সময় নিয়ে তারা একেক সময় একেক কথা বলেছেন। এখন আবহাওয়া-বিদরা বলছেন, আমরা ঠিক ঠাওর করতে পারি নি, বর্ন চোরা ছিল সিত্রাং। শুরু থেকেই সে এলোমেলো আচরণ করেছে। গতিপথ পাল্টিয়েছে বারবার। ঠিক মতো বোঝা যায় নি। আসতে পথে বৃষ্টি ঝড়িয়ে নিজের শক্তি ক্ষয় করেছে। যেমন চট করে এসেছে, তেমনি চট জলদি চলে গেছে।
উপকূলীয় অঞ্চলের বাইরে রাজধানীর ঢাকাতেও সিত্রাংয়ের প্রভাবে ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ কম নয়। বৃষ্টিতে ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কসহ অলিগলি তলিয়ে গেছে। কেরানীগঞ্জের শুভাড্ডায় একটি চারতলা বাড়ি হেলে পড়েছে। বিডিআর ৫ নম্বর গেটের কাছে একটি বাড়ির দেয়াল ধসে চার জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর অধিকাংশ সড়ক ও গলি দুপুরের মধ্যে জলজট সৃষ্টি করে। মানুষ বাসা থেকে বেরুতে পারছিল না। নগরীতে গন-পরিবহনও কম চলাচল করে জলাবদ্ধতার কাড়নে। ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দু’সিটি কর্পোশনকে পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা হস্তান্তরের পরেও অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয় নি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১২৫ কোটি টাকা খরচ করার পরও জলাবদ্ধতা যেমন ছিল তেমনই রয়েছে। অন্যদিকে দায়িত্ব নেওয়ার পর উত্তর সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা দূর করতে এখন পর্যন্ত ৫৩ কোটি টাকা টাকা খরচ করেছে। চলতি বছরে রাখা হয়েছে ৫১ কোটি টাকা। এত কিছুর পরও মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পাঁচ্ছে না। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র ফজলে নুর তাপস বলেছিলেন, আগামীতে আধা ঘণ্টার মধ্যে পানি নেমে যাবে। কিন্তু তার এলাকায় দেখা গেছে দুপুর গড়িয়ে বিকেল সন্ধ্যায় ও পানি নামে নি। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় কল্যাণপুর জলাধারে গত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পানি ৫ দশমিক ৭০ মিটার হয়েছে। এর আগে ২০০৪ সালে জলাধারে পানির স্তর ৬ মিটার হয়েছিল বলে জানা যায়। এত ভোগান্তির পর শেষে মানুষ ফলাফল চায়। ওয়াসার কাছ থেকে নেওয়ার পর সিটি করপোরেশন যদি জলাবদ্ধতা দূর করতে ব্যর্থ হয়, তবে মানুষ নানা কথা বলবে। তাই কথা নয় কাজে দেখাতে হবে, তারা জনগণের ভোগান্তি দূর করতে চান।