আগামী ৫ নভেম্বর বরিশাল নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপিকে বিভাগীয় গণসমাবেশের অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সোমবার বিকেল ৪টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবা উদ্দিন ফরহাদ। তিনি বলেন, বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক, সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ ও আমিসহ কয়েকজন বিকেল ৩টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাই। সেখানে আমরা বরিশাল জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তিনি মৌখিকভাবে বেলস পার্কে (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করেছেন। এখন আমরা সেখানে সমাবেশের আয়োজন নিয়ে কাজ শুরু করবো। এদিকে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্যশ সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বেলস পার্কে (বঙ্গবন্ধু উদ্যানে) সমাবেশের জন্য অনুমতি চেয়েছিলাম। বিকেল ৩টার দিকে ডিসি সাহেব ফোন করে অনুমতির বিষয়টি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। সেইসঙ্গে খুদে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি তার কোনো উত্তর দেননি। তবে জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৭ নভেম্বর একটি অনুষ্ঠান রয়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী যুক্ত থাকবেন। এ কারণে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের একটি অংশ ছেড়ে দিয়ে বিএনপিকে সমাবেশ করার জন্য বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটবে না এমন আশ্বাসও দিতে হয়েছে বিএনপি নেতাদের। এদিকে সমাবেশের আগের দিন ৪ নভেম্বর ও সমাবেশের দিন ৫ নভেম্বর বরিশালে বাস ও থ্রি-হইলার যানবাহন মালিক-শ্রমিক ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে মহানগরের বাইরের ৬ জেলার দূর-দূরান্তের নেতাকর্মীরা বরিশালে আসতে শুরু করেছেন। অনেকেই হোটেলে উঠছেন, আবার অনেকেই আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বরিশাল মহানগরের আশপাশের নেতাকর্মীরা হেঁটে হলেও সমাবেশে আসবেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, আমরা সরকার পতন আন্দোলনের যুদ্ধে নেমেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মানুষকে দেশ রক্ষায় ঠেকানো যায়নি। এ যুদ্ধেও সরকারের কোনো কৌশলই জনসমাবেশে মানুষ আসা রোধ করতে পারবে না। তা আপনারা (সাংবাদিক) দেখবেন।
এদিকে বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে লিফলেট বিতরণকালে বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। শ্রমিক লীগ নেতার নেতৃত্বে যুব ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা পুলিশের সহায়তায় ওই হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা নেতৃবৃন্দ। সোমবার দুপুরের দিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার শানুহার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ হামলা চালানো হয়। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব কাইয়ুম খান জানান, সশস্ত্র হামলায় তিনিসহ শ্রমিক দলের মিঠু বালী, শাহীন সিকদার, বিএনপি নেতা মো. বুলু ও শ্রমিক দলের উপজেলার সভাপতি মো. হাইয়ুম আহত হয়েছেন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি বলেন, বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতৃবৃন্দ উপজেলার বিভিন্নস্থানে লিফলেট বিতরণ করবেন। তাদের আগমন উপলক্ষে নেতৃবৃন্দদের নিয়ে শানুহার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেন। এ সময় শ্রমিক লীগের সভাপতি শিপন মোল্লার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসেন। তাদের কোন নেতা আসবে প্রচার করে সেখানে অবস্থান নিয়ে মিছিলের প্রস্তুতি নেয়। কাইয়ুম বলেন, তখন পুলিশে তাদের ঠেলে রাস্তার অপর পাশে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে তাদের ঘটনাস্থল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। তারা সেখান থেকে না সরলে শ্রমিক লীগ নেতা শিপন ও হেমায়েতের নেতৃত্বে লাঠি-সোটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করে। পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা তাদের পিটিয়ে আহত করেছে। তবে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হেমায়েতউদ্দীন সরদার। এদিকে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পলাশ জানিয়েছেন, চারজন হাসপাতালে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। উজিরপুর মডেল থানার ওসি এসএম কামরুল হাসান বলেন, উভয় পক্ষ ঘটনাস্থলে ছিলো। পুলিশ উভয় পক্ষকে নিবৃত্ত করেছে। কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।