রাজধানী ঢাকায় পথচারীদের জন্য যে ফুটপাত রয়েছে তা এখন পথচারীদের দখলে নেই। নানা পণ্যের বিকিকিনি চলছে সেই সব ফুটপাতে। হকাররা তাদের পসরা সাজিয়ে পথচারীদের চলাচলে বিগ্ন সৃষ্টি করছে। আর তা নির্বিঘ্নে করা সম্ভব হচ্ছে স্থানীয় সরকার দলীয় নেতা, আইন-ম্যান - আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অসৎ সদস্য ও সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের যোগসাজশে। হকারদের কাছ থেকে নানা অংকের চাঁদা তুলে নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটেয়ারা করে। আর এ চাঁদার পরিমাণ সারা ঢাকায় বিরাট অংকের। শ্যামবাজার, বাহাদুর শাহ-পার্ক, লক্ষ্মীবাজার, গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, নিউমার্কেট, ফার্ম গেট, মিরপুর, উত্তরাসহ রাজধানীর ৬৫ টি এলাকার ফুটপাতে এসব হকাররা তাদের ব্যবসা করছেন প্রতিদিন চাঁদা দিয়ে। আর এ চাঁদা তোলার জন্য ৩৮ জন লাইন ম্যান রয়েছে। চাঁদা তোলার সময় এসব লাইন ম্যানের সাথে আরো ৫/৬ জন থাকেন। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে বা গড়িমসি করলে দোকান ভেঙ্গে পসরা রাস্তায় ছিটিয়ে দেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট হকারকে শারীরিক ভাবে প্রহার করা হয়।
বাংলাদেশ হকার ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির হিসাবে তিন লাখ হকারের কাছ থেকে দৈনিক গড়ে ২০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। এ হিসেবে প্রতিদিন ফুটপাত থেকে চাঁদা ওঠে ৬ কোটি টাকা। মাসে যার পরিমাণ ১৮০ কোটি টাকা। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, অবৈধ হকার সংগঠন ও লাইন ম্যান নামধারী চাঁদাবাজেরা অসাধু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের যোগসাজশে এ বিরাট অংকের টাকা অবৈধভাবে ভোগ করছেন। বিভিন্ন থানা ও আদালতে মামলা হলেও তারা গ্রেপ্তার এড়িয়ে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত রয়েছেন। ২০১৬ সালে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব গর্ভন্যান্স এ- ডেভেলপমেন্টের এক গবেষনায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে হকারের সংখ্যা অন্তত: তিন লাখ। ঢাকার দু’সিটি কর্পোশনের ফুটপাতে এসব হকারেরা প্রত্যেকে দৈনিক গড়ে ১৯২ টাকা চাঁদা দেন। এত বছরে মোট ১ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা আদায় হয়, যা ওই সময় দু’সিটি কর্পোরেশনের মোট বাজেটের চেয়ে বেশি। সময়ের ব্যবধানে হকারের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, অনুপাতিক হারে চাঁদার পরিমাণও বেড়েছে।
হকারদের ফুটপাত দখলের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। এজন্য প্রায়ই হকার উচ্ছেদের কথা আলোচনায় আসে। এমনকি বেশ কয়েক বার হকার উচ্ছেদ করা হলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে ফুটপাত আবারো হকারদের দখলে চলে গেছে। রুটি -রুজির কথা বিবেচনা করলে হকার উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। তাই সরকারের এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে এলাকা ভেদে যদি হকারদের কেনাবেচার জন্য নির্ধারিত স্থান নির্বাচন করে স্বল্প ভাড়ায় তা কেনাবেচার জন্য ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি করে, তবে যেমন হকাররা ব্যবসা করতে পারবে, তেমনি সরকারেরও কিছু রাজস্ব আয় হবে। বন্ধ হবে অবৈধ চাঁদাবাজি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে দ্রুত। এতে যানজট থেকেও রেহাই পাবে নগরবাসী। সাথে ফুটপাত নগরবাসীর চলাচলের জন্য নির্বিঘ্ন হবে।