বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, খুলনা রংপুর ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় সমাবেশ যেভাবে বন্ধ করতে পারেনি। ঠিক তেমনি নির্যাতন-নিপীড়ন, হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার করেও ৫ নভেম্বর বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশে জনস্রোত আওয়ামী লীগ ঠেকাতে পারবে না।
বুধবার শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি ৪ ও ৫ নভেম্বরের পরিবহন ধর্মঘটের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, শ্রমিক বা মালিকরা না চাইলেও সরকার দলীয় নেতাদের চাঁপের মুখে সমাবেশ বানচাল করার জন্য ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সবকিছুকে উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে বরিশালে জনস্রোত শুরু হয়ে গেছে।
দুপুরে প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক এম জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসিচব হাবিবুন নবী সোহেল, বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিনসহ বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দরা।
বেগম সেলিমা রহমান সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনের পেশাদার অংশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, গুটি কয়েক দলবাজ কর্মকর্তার কারণে গোটা পুলিশ ও প্রশাসনকে জনগণ যেন ভুল না বোঝে সে বিষয়ে বিএনপি সজাগ দৃষ্টি রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ের জন্যই এ সমাবেশের নাম দেয়া হয়েছে গণসমাবেশ। এটা বিএনপির জনসভা নয়, এটা বিএনপি এবং সকল শ্রেনি পেশার মানুষের উপস্থিতিতে গণসমাবেশ। যা মহাসমুদ্রে রূপান্তরিত হবে। যেখানে অংশগ্রহণ করতে মানুষ বিভাগের বিভিন্ন জায়গা থেকে বরিশাল শহরে অবস্থান নেয়া শুরু করেছে। সবার সহযোগিতায় মহাসমাবেশ সফল হবে এবং ৫ নভেম্বর বরিশাল হবে জনগনের শহর।
দেশের মানুষের মুক্তির আন্দোলন ॥ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, আমাদের এই আন্দোলন দেশের মানুষের মুক্তির আন্দোলন। দেশব্যাপী নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ও মানুষ হত্যার প্রতিবাদের আন্দোলন। তিনি আরও বলেন, সরকার নতুন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহামান ও ডাঃ জোবায়দা রহমােেনর বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা সাজিয়ে গ্রেপ্তারী ফরমায়েশ জারী করিয়েছে।
বুধবার বেলা ১১ টায় নগরীর সদররোডস্থ জেলা ও মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ডাঃ জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারীর প্রতিবাদে মহানগর, দক্ষিণ ও উত্তর জেলা যুবদলের আয়োজনে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথাগুলো বলেছেন।
বরিশালে যানবাহন ধর্মঘটের নেপথ্যে ॥ বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশের দিন ৫ নভেম্বর ও তার আগেরদিন পুরো দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দরা। প্রকাশ্যে মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবিতে দুইদিন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হলেও নেপথ্যে রয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দরা অভিযোগ করে বলেন, সরকার প্রভাব খাটিয়ে যানবাহন চলাচলে দুইদিন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে। তবে বিএনপির এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে বুধবার সকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, মূলত বিএনপি ও জামায়াত জোটের অতীত আন্দোলনের সময় পেট্রোলবোমায় বাস পুড়িয়ে ধ্বংস এবং শ্রমিক হত্যার ঘটনায় মালিক-শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে দুইদিন ধর্মঘটের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছেন। একইসময় পাল্টা ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল জেলা থ্রি-হুইলার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দরা। অপরদিকে যেকোন সময় ধর্মঘটের ঘোষণা আসতে পারে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটসহ দক্ষিণাঞ্চলের সকল অভ্যন্তরীন রুটের নৌ-চলাচলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়কপথে পরিবহন, ছোটযানবাহনসহ নৌ-যানের মালিক এবং শ্রমিকরা সবাই বিএনপি ও জামায়াতের অতীত আন্দোলনের সময় পেট্রোল বোমা হামলা চালিয়ে যানবাহন পুড়িয়ে ধ্বংসসহ মানুষ হত্যার লোমহর্ষক ঘটনা আজো ভুলতে পারেননি। তাই এবার বরিশালে বিভাগীয় গণসমাবেশের নামে বিএনপি তার আগের রূপে ফেরার আশঙ্কায় মালিক ও শ্রমিকরা দুইদিন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে এসব অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন দাবি করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, আমরা তো নিশ্চিত করে বলছি বাস বা থ্রি-হুইলার ধর্মঘটের পেছনে সরকারের ইনডাইরেক্টলি হাত রয়েছে। কারণ সরকার দলীয় লোকজন পরিবহন সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে থাকায় তারা আমাদের সমাবেশ বানচাল করার চেষ্টা করছে।
ধর্মঘটের সাথে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্তা নেই দাবি করে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, বাস মালিক সমিতিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সবদলের নেতারা রয়েছেন। তারা তাদের দাবি আদায়ের জন্য ধর্মঘট ডেকেছেন।
দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে আতঙ্ক ॥ ৩১ অক্টোবরের পর হঠাৎ করে বিভাগীয় শহর বরিশালের শান্ত রাজনীতির মাঠ অশান্ত হয়ে উঠেছে। আগামী ৫ নভেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে ক্রমশ সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন মাঠ দখলে নিয়েছে, ঠিক তখনই আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমেছে। একদিকে চলছে বিএনপির গণসমাবেশ সফল করার প্রস্তুতি, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সন্ধ্যা হলেই শোডাউন দিয়ে বিএনপির সাথে সংঘাতে জড়াচ্ছে। গত দুইদিনে নগরী সংলগ্ন গড়িয়ারপাড়, জেলার বাকেরগঞ্জ, বানারীপাড়া, উজিরপুর ও গৌরনদীতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় উজ্জীবিত বিএনপি অনেকটা হতাশ ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পরেছে। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে মহাসমাবেশকে ঘিরে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছেন সচেতন বরিশালবাসী।
বিএনপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন, গণসমাবেশের আগেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঠে নামিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, যাতে হামলা ও মামলা দিয়ে উজ্জীবিত বিএনপি দলীয় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা যেন বিপরীতমুখী হয়ে সমাবেশ থেকে থমকে দাঁড়ায়। যদিও এখন পর্যন্ত কোন গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া না গেলেও বিএনপির নেতাকর্মীদের আশঙ্কা সমাবেশের আগেই গণগ্রেফতারের সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখে ইতোমধ্যে বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রাতে গাঁ ঢাকা দিয়ে থাকছেন। তবে তারা সমাবেশস্থলে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ায় জেলার বাহিরের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মাধ্যমে ইতোমধ্যে বরিশালে অবস্থান নিয়েছেন। একইসাথে শক্তি বৃদ্ধি করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকছেন, যেন আক্রমণ আসলে পাল্টা আক্রমণ বা প্রতিহত করতে পারেন। বুধবার সকাল থেকে বরিশার শহরজুড়ে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতি তা প্রমান করে দিচ্ছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, শান্ত নগরীতে যারাই বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করবে তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।