কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার হরিজন সম্প্রদায়ের কার্তিক কুমার দাস। একজন সঙ্গীত পাগল মানুষ। নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে ঠাঁই হয়েছে বল্লভেরখাস ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের এক কোণায়। সেখানেই বসত করে কোনোমতে আছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। ২ ছেলে ১ মেয়ে ও স্ত্রীসহ তার ৫ জনের সংসারে তিনিই একমাত্র কর্মক্ষম। মাদারগঞ্জ বাজারে ছোট্ট একটি মেকানিকের দোকান দিয়ে প্রতিদিন আয় করেন ২ থেকে ৩শ টাকা। এই সামান্য আয়ে অতি কষ্টে চালান সংসার। এর মধ্যে দুই ছেলেই জন্ম থেকেই দুরারোগ্যব্যাধি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বেঁচে আছেন অন্যের রক্তের উপর ভরসা করে। বড় ছেলে সাগর কুমার দাস (১৮)। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পরাশোনা করলেও রোগের কারণে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। তবে লেখাপড়া করার ইচ্ছেটা তাকে এখনও তাড়া করে। প্রতি মাসে ২-৩ ব্যাগ রক্ত পুশ করতে হয় সাগরের শরিরে। এরপরও বাজার পরিস্কার করে সেখান থেকে সামান্য টাকা আয় করে বাবাকে সহযোগিতা করে সে। অপরদিকে ছোট ছেলে শাওন কুমার দাস (৯) এর অবস্থা আসঙ্কাজনক। প্লিহা বেড়ে পেট ফেঁপে রয়েছে। তার শরিরে ঢোকাতে হয় মাসে ৪-৫ ব্যাগ রক্ত। প্রতিমাসে এভাবে রক্ত যোগাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পরিবারকে। অনেক সময় রক্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। রক্ত না পেলে ছেলেদের জীবন বাঁচানো নিয়ে সঙ্কায় থাকতে হয় তাদের। এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেকটা কেঁদেই ফেলেন মা ঝুনি রানী দাস ও বাবা কার্তিক কুমার দাস। তারা জানায় দুই ছেলেই এই কঠিন রোগের কারণে আতঙ্কে থাকেন প্রতিনিয়ত। নির্ঘুম রাত কাটে তাদের। রক্তের খোঁজে সবসময় বেগ পেতে হয়। এছাড়াও ছেলেদের রক্ত ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রতিমাসে ব্যয় হয় হাজার হাজার টাকা। তাদের চিকিৎসায় ইতোমধ্যে বাবার সখের হারমনিয়াম, তবলা, মায়ের গহনাসহ সকল সম্পদ বিক্রি করে এখন নিঃস্ব হয়েছেন। এখন একদিকে সন্তানদের চিকিৎসা ব্যয় অপরদিকে সংসারের খরচ যোগানো কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের।
এদিকে ছোট ছেলে শাওনের দ্রুত অপারেশন করার পরামর্শ দিয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. বিমল বিশ্বাস। যাতে ব্যয় হবে কয়েক লাখ টাকা। যা তার পরিবারের জন্য যোগাড় করা অসম্ভব। এজন্য সমাজের বিত্তবান ও দানশীল ব্যাক্তিসহ সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছেন বাবা-মা। স্থানীয়রা জানায় কার্তিক কুমার দাস একদমই হতদরিদ্র। এর মাঝে দুই ছেলের চিকিৎসায় অসহায় হয়ে পড়েছেন বাবা মা। তাদের চিকিৎসার জন্য এই মোটা অংকের টাকা যোগান দেয়া একবারেই সম্ভব নয়। এজন্য সকলকে পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।
বল্লভেরখাস ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমি বিষয়টি অবগত আছি। পরিকবারটি খুবই অসহায়। পরিষদের পক্ষ থেকে সুযোগ হলে কার্তিক চন্দ্রের দুই ছেলের চিকিৎসার জন্য সহায়তা করা হবে। তবে দেশের বিত্তবান ও দানশীল ব্যাক্তিসহ সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার জন্য আমিও অনুরোধ জানাচ্ছি।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা সমাজেবা অধিদপ্তর থেকে থেলাসেমিয়া রোগের জন্য যে আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয় তার জন্য আবেদন করতে বলেছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করলে তাদরে দুই ভাইকে সহযোগিতা করা হবে। এছাড়াও অন্যভাবেও ওই পরিবারে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা করা হবে। সহায়তা করতে যোগাযোগ, বাবা-০১৭১৯৭০৯৬৯৩ (পারসোনাল-বিকাশ ও রকেট)।