মানুষের প্রধান খাদ্যপন্য চাল ও গম। দেশের বাজারে এ দু’টি দানাদার পণ্যের দাম ঊর্ধ্বŸগতি। কিন্তু বিশ্ববাজারে বর্তমানে এ দু’টির দাম নিম্নমুখী। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাজারে এর কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। চাল আমদানি বাড়াতে সরকার বেসরকারি খাতকে শুল্ক কমিয়ে দিয়ে আমদানি সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু এর প্রভাবও বাজারে পড়েনি। সরকার গত জুলাইয়ে প্রায় ৪০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১৩ লাখ ৪২ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এ পর্যন্ত মাত্র ১ লাখ ৮০০ হাজার টন চাল আমদানি করেছে। এ পর্যন্ত ৮ লাখ ৯১ হাজার টন আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। যার মধ্যে ২ লাখ ৯ হাজার টনের ঋণ পত্র নিষ্পত্তি হয়ছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত শুল্ক ছাড়ের সুযোগ দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির সুযোগ দিয়েছে। এদিকে রাশিয়ায় গমের দাম প্রতি সপ্তাহে কমেছে। গত এক সপ্তাহে রাশিয়ায় গম প্রতিটনে ৯ ডলার কমে দাঁড়িয়েছে ৩২৩ ডলার। এখন চুক্তি করলে জাহাজ ভাড়া ,অন্যান্য খরচ সহ তা দাঁড়াবে ৪০১ ডলার। ভিয়েতনাম থেকে সেদ্ধ চাল প্রতিটন ৫২১ ডলার ও আতপ চাল ৪৯৪ ডলার কেনা হচ্ছে। সেপ্টেম্বরে ওই চাল আন্তর্জাতিক বাজার দর থেকে প্রতি টনে ৭৮ ডলার বেশি দিয়ে কেনার চুক্তি হয়। একই সময় ভারত থেকে এক লাখ টন এবং মিয়ানমার থেকে দুই লাখ টন চাল কেনার চুক্তি হয়। ভিয়েতনাম থেকে জাহাজ ভাড়া, অন্যান্য খরচ সহ চাল কিনতে গেলে এখন প্রতি টনের দাম দাঁড়াবে ৪৮৫ ডরার। ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে আনা চালের দাম পড়বে যথাক্রমে ৪২০ ও ৪৬৮ ডলার। অর্থাৎ এখন রাশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে গম-চাল কিনতে প্রতি টনে ২৯ থেকে ৩৬ ডলার কম পড়বে।
চলতি মাসে প্রকাশিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বৈশ্বিক খাদ্য পণ্যের মূল্য বিষয়ক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্ববাজারে চাল ও গমের দাম কমতে শুরু করছে। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে চাল ও গমের মতো দানাদার খাদ্যের দাম ৩ শতাংশ কমে। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে করা এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, এফএও পূর্বাভাস অনুযায়ী সামনের দিন গুলোতে খাদ্যের দাম বাড়বে। এই যুক্তিতে সরকার রাশিয়া থেকে প্রতিটন ৪৩০ ডরার দরে ৫ লাখ বেশি টন গম কেনার চুক্তি করে। যদিও ওই সময় ৩৮০ ডলার দরে রাশিয়া বিশ্ববাজারে গম বিক্রি করছিল। বেশি দামে কেনা রাশিয়ার ওই গমের এক লাখ টন ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌচেছে।
বেশি দামে কেনা পণ্য কম দামে বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হতে চান না। তাই সময়ের ব্যবধানে দেশীয় বাজারে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেন। আর এটা এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যে এখন চালের চেয়ে গমের দাম বেশি হয়ে গেছে। যা ইতঃপূর্বে কখনো ঘটে নি। অন্যদিকে সরকারের উচিত ডলার সংকটের চলমান সময়ে বিশ্ব বাজার থেকে যে দামে চাল-ডাল কেনা হয়েছে, তা পুন: মূল্যায়ন করা। তানা হলে দেশের দরিদ্র ও দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে না পেরে অপুষ্টিতে ভুগছে। সরকার বলছে, বর্তমানে খাদ্যপন্যের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। কাজেই বিশ্ব বাজারে যাচাই বাছাই করে পণ্য কেনা জরুরি।