পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দুবলার জেলে পল্লির ৪টি চরে শুঁটকি উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে। এজন্য বনবিভাগ থেকে অনুমতি (পাস) গ্রহন করে ইতোমধ্যে প্রায় ১০হাজার জেলে ও মৎস ব্যবসায়ীরা চরগুলোতে পৌছে শুঁটকি কার্যক্রম শুরু করেছে। গত মৌসুমে এ খাত থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও চলতি মৌসুমে সরকারি রাজস্ব আয়ের লক্ষ মাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৫ মাস শুটকির এ কার্যক্রম চলবে। গত বছরের তুলনায় সম্প্রতিক কালে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে চর ভেঙ্গে সাগরে বিলিন হয়ে প্রায় ২০% আয়তন কমেছে এবং সুপেয় পানির সংকট রয়েছে বলে দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপ জানিয়েছে। দুর্যোগকালীন সময় জেলে ও ব্যবসায়িদের সহায়তা প্রদানের জন্য সিপিপি ৬০ সদস্যকে নিয়ে ৬ টি টিম গঠন করা হয়েছে।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আয়ের বড় অংশ আশে এই শুঁটকি খাত থেকে। এবছর দুবলা জেলেপল্লীর টহল ফাঁড়ির আওতাধীন আলোরকোল, মাঝের কিল্লা, শ্যালা ও নারকেলবাড়িয়া এই চারটি চরে এক হাজার ৩০টি জেলে ও শুঁটকি সংরক্ষণের ঘর, ৬৩টি ডিপো ঘর, ৯৬টি দোকান ঘর তৈরীর অনুমোতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবছর এসব চরে শুঁটকি সংশ্লিষ্ট ১০ থেকে ১২ হাজার লোকের সমাগম হবে। ১ নভেম্বর থেকে ৩১মার্চ পর্যন্ত পাঁচ মাস চলবে শুঁটকি প্রক্রিয়ার কাজ।
জানা গেছে, দেশের সামুদ্রিক শুঁটকি উৎপাদনের অন্যতম অঞ্চল হচ্ছে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোল রেঞ্জের দুবলার চর। বঙ্গোপসাগর থেকে আহৃত লইট্যা, ছুরি, চিংড়ি, লাক্ষা, জাবা, পোয়া মাছ থেকে তৈরী শুঁটকি খুবই জনপ্রিয়। এখান থেকে উৎপাদিত এসব শুঁটকি চলে যায় বিভিন্ন অঞ্চলে। আবার দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাছাইকৃত শুঁটকি বিদেশেও রপ্তানি হয়। এ ছাড়া জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট প্রজাতির মাছ, কাঁকড়া ও জলজপ্রাণি শুঁকিয়ে তা দিয়ে ফিশ মিল তৈরী করা হয়।
দুবলার মাঝের কিল্লার চরের চট্টগ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. জাহিদ হোসেন বহদ্দার জানান, তিনি প্রায় ১৫-১৬ বছর ধরে দুবলার চরে শুঁটকি ব্যবসা করেন। প্রতিবছর ঝড়-জলোচ্ছাসে ঘর ও শুঁটকি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গতবছর তার দুর্যোগে তার প্রায় ১০ লাখ টাকা শুঁটকি নষ্ট হয়ে যায়। এবারও সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই এসেছেন। ঘর ও মাচা তৈরীর কাজ করছেন জেলে শ্রমিকরা।
শরণখোলা উপজেলা সিপিপি টিম লিডার মোঃ মাহবুবুর রহমান মিন্টু ফকির দুবলার চর থেকে শরণখোলায় ফিরে এসে জানায়, দুর্যোগকালীন সময় জেলে ও ব্যবসায়িদের সহায়তা প্রদানের জন্য ৬০ জন সদস্যকে নিয়ে ৬ টি টিম গঠন করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেয়ার জন্য দুবলা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র সিপিপির একটি অফিস নেয়া হয়েছে। যাতে তাৎক্ষণিক চরে বার্তা প্রদান করা যায়।
দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সভাপতি মোঃ কামাল আহম্মেদ দুবলার চর থেকে বলেন, শুটকি উৎপাদন ও ব্যবসার সাথে যারা জড়িত প্রায় ১০ হাজার জেলে দুবলার চরে এসে শুটকি প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন। চরে পূর্বে যে আয়তন ছিল সিত্রাংয়ের প্রভাবে প্রায় বিশ শতাংশ জায়গা সাগরে বিলিন হয়েছে। যে কারণে চরে জায়গা কমেগেছে। তাতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। সুপেও পানির সংকট রয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, শুঁকটি মৌসুমকে ঘিরে এবছর অনুমোদিত চরগুলোতে ১০ হাজারেরও বেশি জেলে-মহাজন ও দোকানী অবস্থান করছেন। ১ নভেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই পাঁচ মাস চলবে শুঁটকি উৎপাদন প্রক্রিয়া। চরে অবস্থানকারীদের ঘর তৈরীর জন্য সকল মালামাল নিজ নিজ এলাকা থেকে আগেই নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বনের কোনো প্রকার গাছপালা ব্যবহার করতে পারবেন না। বনের কোনো ক্ষতি না হয় এজন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গতবছর কয়েক দফা দুর্যোগে শুঁটকি নষ্ট হয়েছে। তারপরও সাড়ে ৪ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এবছর পাঁচ কোটি টাকা রাজস্ব আয় নির্ধারণ করা হয়েছে। বড় ধরণের কোনো দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ১ নভেম্বর মঙ্গলবার থেকে দুই সহশ্রাধিক ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে জেলেরা মাছ শিকারে নেমে পড়েছেন সাগরে।