বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হবে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক)।
গণসমাবেশকে ঘিরে পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী শুক্রবার সকাল থেকে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার সাথে সড়ক ও নৌপথে সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সবশেষ শুক্রবার মধ্যরাতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস চলাচল।
মহাসড়কে নসিমন, করিমন, থ্রি-হুইলারসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধের দাবিতে পরিবহন এবং মহাসড়কে চলাচলের দাবিতে থ্রি-হুইলার মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের উদ্যোগে ৪ ও ৫ নভেম্বর দুইদিনের ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। তবে কোন কারণ ছাড়াই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আজ ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে লঞ্চ চলাচল। ফলে পথে পথে চরম ভোগান্তিতে পরেছেন সাধারণ জনগণ। সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছেন বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী। যেকারনে বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশের নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে ৩৬ ঘণ্টা আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে।
স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দরা জানিয়েছেন, সড়ক ও নদীপথ বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা অনুযায়ী নেতাকর্মীরা আগেই সমাবেশস্থলে এসেছেন। তারা বৃহস্পতিবার রাতে সমাবেশস্থলের মাঠে রাত কাটিয়েছেন। আর নেতাকর্মীদের থাকার জন্য মাঠের মধ্যে সামিয়ানা ও ত্রিপলের ছাউনি দেয়া হয়েছে। গণসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কয়েক হাজার নেতাকর্মীর জন্য দুই রাত মাঠে কাটানোর প্রস্তুতি নিয়ে তাঁবু টানিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এসব নেতাকর্মীদের খাবারের জন্য মাঠেই বিশেষ ব্যবস্থায় রান্না করা হচ্ছে।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর মাইনকা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মহসিন সিকদার বলেন, অসম্ভব দুর্ভোগ-দুর্দশা সহ্য করে বৃহস্পতিবার রাতে নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশস্থলে এসেছি। সরকার সব বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা ট্রলার ভাড়া করে কয়েক হাজার মানুষ এসেছি। এত কষ্ট করছি শুধু ভোটাধিকার ফেরত পাওয়ার জন্য।
তিনি আরও বলেন, ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে পারিনা। অথচ দেশ স্বাধীন হয়েছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। যুবদল নেতা মনির আকন বলেন, একাধিকবার হামলা ও মামলার স্বীকার হয়েছি, কষ্ট করছি, আরও করবো। কিন্তু ভোট না দিয়ে মেম্বার, চেয়ারম্যান ও এমপি নির্বাচনের খেলা আর দেখতে চাই না।
পাথরঘাটার বিএনপি কর্মী সাইদুল ইসলাম বলেন, সরকারের নির্দেশে আমাদের সমাবেশস্থলটি বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে, লাভ হয়নি। আমরা চলে এসেছি শুধু ভোটাধিকার ফেরত পেতে চাই। বিনাভোটের জনপ্রতিনিধি আর দেখতে চাই না।
জেলা উত্তর বিএনপির সিনিয়র সদস্য এসএম মনির-উজ জামান মনির বলেন, সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। যেকোনো মুহুর্তে এই সরকারের পতন ঘটবে। বাংলাদেশের জনগণ এ সরকারের পতন চায়, নিজের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এজন্যই সমাবেশের দুইদিন আগেই সমাবেশস্থল পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিভিন্নস্থানে গুলিতে দলের নেতাকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদসহ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
এতে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় নেতারা গণসমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন মাধ্যমে বিকল্প ব্যবস্থায় নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসার সময় সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশের বাঁধা সম্মুখীন হয়েছেন। তারা আরও বলেন, ধর্মঘটসহ যতো বাঁধাই আসুক না কেন বরিশাল বিভাগের কয়েক লাখ মানুষ গণসমাবেশে উপস্থিত হবেন। গণসমাবেশে যে জনস্রােত হবে তা কোন কিছুর বিনিময়েই আটকানো যাবে না।