বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশের একদিন আগে জেলায় লঞ্চ, স্পিডবোট, বাস, মাইক্রোবাস, থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। নৌ ও সড়কপথে গণপরিবহনে প্রায় সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় কার্যত সারাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বরিশাল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
শুক্রবার (৪ নভেম্বর) ভোর থেকে কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লাসহ ১৪টি অভ্যন্তরীণ রুটে এবং রুপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে ২১টি অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। একইভাবে বরিশাল নদীবন্দর থেকে ১২টি নোরুটে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল। চলছে না স্পিডবোট, মাইক্রোবাস ও থ্রি হুইলারও।
সকালে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বের হওয়া যাত্রীরা বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও বাস না পেয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের কেউ কেউ বলেন, হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি ছাড়াই বাস বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ চরম দুভোর্গের শিকার। এভাবে গণপরিবহন একযোগে বন্ধ রাখায় সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। যাত্রীরা জনদুর্ভোগ বিবেচনা করে অবিলম্বে বাস-লঞ্চ চালুর দাবি জানান।
তবে বাস মালিক ও থ্রি হুইলার যান সমিতির নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, নায্যদাবি আদায়ে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো দাবির বিষয়ে কিছু বলেননি তারা
বরিশাল বিভাগীয় বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যানবহনসহ অনুমোদনহীন নসিমন-করিমন ও অন্যান্য যানবহন চলাচল করছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়য়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে লিখিতভাবে কয়েক বার জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বিভাগের ছয় জেলার বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বেশ কয়েক দফা আলোচনা করে শুক্র ও শনিবার কর্মবিরতি পালন করছেন।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা মিশুক, বেবিট্যাক্সি, টেক্সিকার ও সিএনজি অটোরিকশা চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কামাল হোসেন মোল্লা বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর তিন চাকার যানের ভাড়ার চার্ট প্রদান, সহজ শর্তে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, সড়কে বাস মালিক-শ্রমিকদের দ্বারা তিন চাকার যান চালকদের নির্যাতন ও হয়রানির শিকার বন্ধের দাবিতে আজ থেকে দুদিন সব ধরনের তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ থাকবে। অনেক আগে থেকেই এসব দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলন করে আসছি।
বিআইডবিব্লউটিএ বরিশাল কার্যালয়ের বন্দর কর্মকর্তা মো. আবদুর রাজ্জাক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণসহ ১২টি রুটে সকাল থেকে ছোট লঞ্চ চালাচল করছে না। তবে গতকাল রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দুটি লঞ্চ ভোরে বরিশাল নৌবন্দরে পৌঁছেছে। তবে আজ রাতে বড় লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়বে কি না, সে বিষয়ে জানা যায়নি।
গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করার বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান খান ফারুক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আগামীকাল শনিবার (৫ নভেম্বর) বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে নানা অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সমাবেশ কেন্দ্র করে লঞ্চসহ গণপরিবহন বন্ধ করা হয়েছে। তবে এমনটি আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম। এরপর তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। আশঙ্কা করছি খেয়াঘাটও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সেভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক বরিশালে এসে পৌঁছেছেন। তবে নেতাকর্মীদের অনেকে পথে বাধা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শনিবার বরিশালের গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে।