কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের বিশাল কর্মযজ্ঞে কাজ করা অভিবাসী শ্রমিকদের ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ নিয়ে শুরু থেকেই হয়ে আসছে নানা সমালোচনা। আসর শুরুর প্রাক্কালে এবার ফিফার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তাদের দাবি, মানবাধিকার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থা। অ্যামনেস্টি মনে করে, বিশ্বকাপ শুরুর আগে স্রফে মুখের কথা নয়, কাজেও মানবাধিকারের দিকটি নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে ফিফাকে। মধ্যপ্রাচের দেশ কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় সমালোচনা। বিতর্কিত এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতার অনেক কারণের মাঝে অন্যতম ছিল দেশটির ফুটবলের জন্য বিরূপ আবহাওয়া। ফুটবল বিশ্বকাপ সাধারণত হয়ে থাকে জুন-জুলাইয়ে। কিন্তু ওই সময়ে দেশটির তাপমাত্রা থাকে অত্যধিক, সেই কারণেই এবার বিশ্বকাপ হচ্ছে নভেম্বর-ডিসেম্বর। শুরুর সেই বিতর্ক স্তিমিত হওয়ার আগেই নতুন করে সমালোচনা শুরু হয় দেশটির মানবাধিকার রেকর্ড, অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বাজে আচরণ এবং দেশটির আইনে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে তুলে ধরার মতো বিষয়গুলো। অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি তাদের অন্যায় আচরণের অভিযোগ বেশ গুরুতর আকার ধারণ করে। কদিন আগেও জোরপূর্বক শ্রমিকদের উচ্ছেদ করার খবর প্রকাশ করে রয়টার্স। বিশ্বকাপে 'ডি' গ্রুপে থাকা অস্ট্রেলিয়া ১০ দিন আগে এক ভিডিও বার্তায় কাতারে সমকামিতার সম্পর্ককে অপরাধমুক্ত করার আহ্বান জানায়। দেশটির জাতীয় দল বিশ্বকাপ আয়োজনে জড়িত কর্মীদের অধিকারের উন্নতির দাবি জানিয়েছে। এর আগে আরও কয়েকটি দেশ বা তাদের দল কিংবা কোনো খেলোয়াড় বা কোচ ব্যক্তিগতভাবে কাতারের চলমান বিতর্কিত ইস্যুগুলো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং নিন্দা জানিয়েছেন। এসবের প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এবং সংস্থাটির মহাসচিব ফাতমা সামৌরা এ বিষয় নিয়ে আর জল আর না ঘোলা করার আহ্বান জানান। তারা বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোকে আদর্শগত ও রাজনৈতিক ‘যুদ্ধ’ বন্ধ করে ফুটবলে মনোযোগ দেওয়ার বার্তা দেন। দলগুলোর প্রতি ফিফার এই বার্তায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। গত মে মাসে টুর্নামেন্টের বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরির সময় ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের জন্য আহ্বান জানায় সারা বিশ্বে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাটি। সংবাদ বিবৃতিতে সংস্থাটি শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের দাবির বিষয়টি আবার তুলে ধরেছে। সমকামীদের বিষয়ে কাতারের দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের সেখানে যেসব সমস্যার মুখে পড়তে হয়, ফিফা বিষয়গুলো অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে অ্যামনেস্টি। সমাধান করতে আয়োজকদের 'আশ্চর্যজনক' ব্যর্থতার জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে। “এ লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপ হবে, টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই অভিবাসী কর্মীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য একটি তহবিল গঠনের প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া। আর সমকামী মানুষেরা যাতে বৈষম্য বা হয়রানির সম্মুখীন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এটি আশ্চর্যজনক যে তারা এখনও তা করেনি।” “এই টুর্নামেন্টকে সম্ভব করতে লাখ লাখ কর্মী নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছে এবং তাদের অধিকারগুলো ভুলে যাওয়া বা বাতিল করে দেওয়া যায় না। তাদের ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য, স্রফে মুখের কথা নয় এবং সময়ও ফুরিয়ে আসছে।” কাতারের দোহায় আগামী ২০ নভেম্বর শুরু হবে এবারের বিশ্বকাপ।