শ্যামনগর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আপিল মামলার শুনানীসহ বাদঘাটার মত গুরুত্বপুর্ন মৌজাসমুহের যাঁচ’কে কেন্দ্র সেটেলমেন্ট অফিসে অপতৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে তারা। খতিয়ান সংগ্রহ থেকে শুরু করে নোটিশ জারি এমনকি দাপ্তরিক গুরুপুর্ন নানান কাজে বিশেষ ভুমিকা পালন করছে বহিরাগত এসব দালাল।
এদিকে সেটেলমেন্ট অফিসে দালাল চক্রের অপতৎপরতা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ন্যায় বিচার বঞ্চিত হওয়ার শংকায় পড়েছে সাধারন সেবা প্রার্থীরা। বিবাদমান পক্ষের নিকট হতে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভাবিত করে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
জানা গেছে উচ্চ আদালতের নির্দেশক্রমে ভুমি সংক্রান্ত কিছু মামলা পুনঃবিচারের জন্য সম্প্রতি শ্যামনগর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে ফেরত আসে। এ ছাড়া উপজেলা সদরের বাদঘাটাসহ বেশকিছু গুরুত্বপুর্ন মৌজার যাঁচ এর কাজও শুরু হয়েছে সম্প্রতি। অভিযোগ উঠেছে মামলার পুনঃশুনানীসহ যাঁচ’কে পুঁজি করেই মুলত তৎপর হয়েছে স্থানীয় একাধিক দালাল চক্র। সেটেলমেন্ট অফিসের নিম্মপদস্থ কর্মচারীদের ‘ম্যানেজ’ করে নোটিশ জারির অজুহাতে এসব দালাল বিচারের অপেক্ষায় থাকা মামলার বাদি/বিবাদী পক্ষের কাছে পৌছে যাচ্ছে। এসুযোগে বিচারাধীন মামলাসমুহের গুরুত্বপুর্ন তথ্য লেনদেন ও পাঁচারসহ বিচারের ক্ষেত্রে সুবিধা পাইয়ে দেয়া ছাড়াও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা।
অভিযোগ নোটিশ জারিসহ নানা অজুহাতে উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে প্রবেশর পর এসব দালাল দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে সখ্যতা গড়ে অনৈতিক সুযোগ নেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। এমনকি বিচারের অপেক্ষায় থাকা নিজেদের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের সহানুভুতি ‘লাভে’ তারা মরিয়া বলেও অভিযোগ। এ ছাড়া যাঁচ এর মত গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে এসব দালাল বিশেষ প্রভাভ বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক ভুক্তোভোগী জানায় বর্তমানে সেটেলমেন্ট অফিসে তৎপর দালালের অনেকে ইতঃপূর্বে কোটি কোটি টাকার সরকারি জায়গা নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নেয়। বিচারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত কাগজের বুনিয়াদে সেসব মুল্যবান জমি হাতিয়ে নিয়ে তা চড়া দামে বিক্রি করেছে। ৩১ ধারার শুননানীতে ‘টিকবে না’ বলে মতামত দিয়েও কয়েক কর্মকর্তা ইতঃপূর্বে এসব দালালের পক্ষে ৩০ ধারার শুনানীতে রায় দেয় বলেও দাবি এসব ভুক্তোভোগীর। তারা দাবি করেন কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে পুর্ব পরিচয় বা সখ্যতার কারণে পুনঃশুনানীসহ যাঁচ পর্বে পৌছে শুধুমাত্র এসব দালালের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার শংকা করছেন। খতিয়ান সংগ্রহসহ রেকর্ডরুমের গুরুত্বপুর্ন তথ্য উদ্ধার ও পাঁচারের সাথে এসব দালাল চক্রের সদস্যরা জড়িত দাবি করে ভুক্তোভোগীরা অভিযোগ করেন দালালদের কাছে সাধারন সেবা প্রার্থীরা জিম্মি। উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসকে দালালমুক্ত করতে ভুমি অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দুদুক, এলিট ফোর্স র্যাবসহ সরকারের অপরাপর বিশেষ সংস্থা এবং বাহিনীর হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেন তারা। যদিও নোটিশ জারির শুরুতে স্থানীয় কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি স্বীকার করেন সেটেলমেন্ট অফিসের এক কর্মচারী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন কর্মকর্তাদের সতর্কবার্তার পর নোটিশ জারিতে বহিরাগতদের এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে গোটা সেটেলমেন্ট অফিসে দালালদের আনাগোনা বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি উর্ধ্বতনদের দৃষ্টি আকর্ষনের অনুরোধ করেন।