বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত আগস্ট থেকে বিএনপির ধারাবাহিক গন-সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম হওয়ায় সরকারি দল আওয়ামী লীগ রাজপথ তাদের দখলে রাখতে নেতা কর্মীদের মাঠে নামিয়েছে। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুরের বিএনপির সমাবেশ গুলোতে যাতে লোক সমাগম না হয়, সে জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পথে পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সদস্যরাও তল্লাসির নামে বিএনপির নেতাকর্মীদের হেনস্থা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও সরকারী দল আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপির সমাবেশে জনসভাকে ঠেকাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাধা সৃষ্টি করে নি। তবে খুলনা বিভাগীয় সমাবেশের আগের দিন ও পরের দিন গণ-পরিবহনে হরতাল ডেকে কার্যত খুলনাকে সারা দেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। একই অবস্থা রংপুরের সমাবেশের সময়। আগামী ৫ নবেম্বর বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে ও জেলা মটর মালিক গ্রুপ দু’দিন হরতাল আহবান করেছে। সাথে ছোট গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে। বেটারি চালিত অটোরিকশা, মটর সাইকেল সহ অন্যান্য যান বাহনের মালিকরা বরিশালে জনযান বন্ধ করে দেওয়ারও আশঙ্কা করছে বিএনপি।
অন্যদিকে সরকারী দল আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে রংপুরের সমাবেশের দিন শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পশ্চিমে যেখানে আগে বাণিজ্য মেলা হোতো সেখানে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ব্যাপক জনসমাগম ঘটিয়েছে। আগামী ৫ নবেম্বর কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সেখানেও ব্যাপক জনসমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলো-গ্রাউন্ডে সমাবেশ আয়োজন করছে আওয়ামী লীগ এবং সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দেবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ২২ তম জাতীয় সম্মেলন করবে ২৪ ডিসেম্বর। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকায় সমাবেশ করার কথা। এছাড়াও আওয়ামী লীগ আগামী দু’মাসে ৬-৭ টি বড় সমাবেশ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আওয়ামী লীগ বলছে, তারা বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করছে না। তারা তাদের দলীয় কর্মসূচি পালন করছে।
রাজপথ দখলের এ আন্দোলনের ঢেউ জাতীয় সংসদেও লেগেছে। রংপুরের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব ঘোষণা দিয়েছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত হলে যে কোনো সময় বিএনপির ৭ সংসদ সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। এদিকে ৩০ অক্টোবর ২০ তম সংসদ অধিবেশন শুরু হবার পর জাতীয় পার্টি সংসদীয় দলের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দলীয় উপদেষ্টা রওশন এরশাদের স্থলে দলীয় চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ব্যপারে স্পিকারের সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত তারা সংসদ অধিবেশনে যোগ দিবেন না। কিন্তু পর্দার অন্তরালে সমঝোতা করে তারা পরদিনই সংসদে যোগ দিয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন এখনো ১৪ মাস বাকি। ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিতর্কের ফলে জাতীয় পার্টি গৃহবিবাদে ব্যস্ত। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বিএনপি নিজেদের সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ় করতে তৎপর। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের মধ্যে থেকে তারা তাদের নিজ নিজ দলীয় কর্মসূচি পালন করবেন। কোনো রকম সংঘাত সংঘর্ষ সন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াও কাম্য নয়।