যশোরের ঝিকরগাছা শহীদ মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজের অদম্য মেধাবী, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী জ্যোতি হোসেন এইচ এস সি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। জানালেন পরীক্ষা ভালো হয়েছে। প্রতিবন্ধীর কারণে নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বেশি পেয়েছেন। শ্রুতি লেখক হিসেবে পাইলট উচ্চ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম খাতুন।
তার হাত পা সহ পুরো শরীর অবশ বা পক্ষঘাতগ্রস্থ। শুধু মুখ দিয়ে কথা বলতে পারেন। এজন্য পরীক্ষার রুমে শ্রুতি লেখক হিসেবে ছিলেন। মরিয়ম খাতুন।
পক্ষাঘাতগ্রস্থ জ্যোতি এভাবেই প্রাথমিক, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রতিবারই জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এবারের পরীক্ষাতেও সে যোগ্যতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে বলে জানিয়েছেন।
ঝিকরগাছা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের আবদুল খালেক এবং রেক্সোনা হোসেন দম্পতির বড় মেয়ে এই জ্যোতি হোসেন।২০০২ সালে তার জন্ম। আর দশটা শিশুর মতই স্বাভাবিক ছিলো তার জীবন। ২০০৭ সালে একটি দূর্ঘটনা তার সমস্ত স্বপ্ন ওলট-পালট করে দেয়। নানাবাড়ি থেকে ফেরার পথে ভ্যানের চাকার সাথে ওড়না জড়িয়ে গলায় ফাঁস লেগে তার পুরো শরীর প্যারালাইজড হয়ে যায়। শত চেষ্টার করেও ডাক্তাররা তাকে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেন নি। জ্যোতির পিতা সাবেক ব্যাংকার আবদুল কাদের বলেন, সে অসুস্থ হওয়ার পর আমি তাকে নিয়ে ঢাকা, কলিকাতা, মাদ্রাজ, ভেলোর সহ সব জায়গায় নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। জ্যোতির মা রেক্সোনা হোসেন বলেন, আমার মেয়ে ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবী। অসুস্থ হওয়ার পরও সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছে। পারবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। এরপর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির সময় কয়েকটি স্কুল তার শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে ভর্তি নিতে চায়নি। অবশেষে বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে অবস্হিত ঝিকরগাছা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি নেয়। প্রতিদিন হুইল চেয়ার ঠেলে আমি তাকে নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করেছি। এভাবেই ঐ স্কুল থেকে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর ঝিকরগাছা শহীদ মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজে এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়।রোববার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তার পরীক্ষা ভালো হয়েছে। আপনারা দোয়া করবেন, এবারও সে জিপিএ ৫ পাবেন ইনশাআল্লাহ।
জ্যোতি জানান, আমি পড়াশোনা করে আবহাওয়াবিদ হতে চায়। এইচ এস সি পাশ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন। সে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।