রোপা আমনের ধান ক্ষেতের রোগ ও পোকামাকড় দমনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় কৃষকেরা নিয়মিত ‘আলোক ফাঁদ’ স্থাপন ও অতন্দ্র জরিপ,পার্চিং, ধান ক্ষেতে বিলি কাটাসসহ নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। এতে পোকা দমনসহ ক্ষেতে ক্ষতিকর কি ধরনের পোকা ও রোগ রয়েছে তা শনাক্ত করা যাচ্ছে। ফসলের জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তা দমন করতে আলোক ফাঁদ ও পার্চিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই পদ্ধতিগুলো কৃষকদের মাঝে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন মন্ডল জানান, উপজেলার পাঁচটি ব্লকে প্রতি সপ্তাহে কৃষকদের সাথে নিয়ে অতন্দ্র জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এবং ফসলের মাঠে পোকা মাকড় ও রোগ আছে কি না তা জানা যায়। যদি ক্ষতিকর রোগ ও পোকা মাকড় পাওয়া যায় তাহলে সে অনুযায়ী কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রূপসা উপজেলায় ৩৮৮৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। রোপা আমন মৌসুমে সচেতনতার অভাবে অনেক কৃষক জমিতে ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ করার আগেই কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন। এতে ফসলের জমির উপকারী অনেক পোকা মারা যায়। আলোর ফাঁদ ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকা সনাক্তের পর ধানের জমিতে বিলি করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহ দেয়া হচ্ছ। বাগমারা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিমাদ্রী বিশ্বাস বলেন, এরইমধ্যে কিছুকিছু গাছে শীষও বের হয়েছে অনেক জমির ধান থোর অবস্থায় রয়েছে। এই সময়ে ধান ক্ষেতে বাদামি গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা), সবুজ ঘাসফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা, গান্ধি পোকা, মাজরা পোকাসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকা আক্রমণ করে। পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করতে আমন খেতে আলোর ফাঁদ ব্যবহার শুরু করা হয়, আর তা চলবে ধান কাটা পর্যন্ত। ইতোমধ্যে বাগমারা ব্লকের বিভিন্ন স্থানে আমন ধানের ক্ষেতের পাশে ‘আলোক ফাঁদ’ স্থাপন করা হয়। ধান পাকার আগ পর্যন্ত ক্ষেতে এ কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ ফরিদুজ্জামান জানান, উপজেলার ১৫ টি ব্লকে প্রতি বুধবার আলোর ফাঁদ স্থাপন করা হয় আর এর মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকা সনাক্ত করা যায় এবং কিছু পোকা মারা যায়। এটি ক্ষতিকর পোকা মাকড় চিহ্নিত করার জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তি। এ ছাড়া আলোক ফাঁদের সময়ে পোকা মাকড় দমনের জন্য পরামর্শ দেয়া হয় এবং লিফলেট বিতরণ করা হয়। বর্তমানে কৃষকরা এই প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়ে পোকা মাকড় দমন করছে। এ ছাড়া কৃষি অফিসের পক্ষ হতে ইতোমধ্যে নিকলাপুর, মৈশাগুনি ও জাবুসা গ্রামে কৃষকদের রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণের ক্ষতি হতে রক্ষার জন্য ভিডিও প্রদর্শণ ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। তিনি আরো জানান এ সচেতনতামূলক কার্যক্রম মৌসুম ব্যাপী চলমান থাকবে।