চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার মেঘনার পাড় থেকে নদীর ভাংগন এলাকার এটেল মাটি চুরি করে কেটে মুন্সিগঞ্জ ও না'গঞ্জের বিভিন্ন ব্রিকফিল্ডে বিক্রি করছে মাটি খেকো চক্র।এর সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকার দলের প্রভাবে কতিপয় লোক জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবছর শুস্ক মৌসুম এলে মাটি খেকো চক্র সক্রিয় হয়।তারা অবৈধভাবে রাতের অন্ধকারে এবং ভোর বেলায় একাধিক ভেক্যু মেশিন বসিয়ে মাটি কেটে ট্রলার ও কার্গো ভর্তি করে পাচার করছে।
ফলে উপজেলা ও ইউনিয়ন ভুমি অফিস সরকারি বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে। নদীর পাড়ের মাটি বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে মাটি খেকো চক্র।
চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর, ইব্রাহিম পুর,হানারচর,চান্দ্রা ইউনিয়ন ও হাইমচর উপজেলার নীলকমল ও গাজীপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মাটি কেটে বিক্রি করা হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
হাইমচর উপজেলার ৪নং নীলকমল ইউনিয়নের ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডের মাঝি কান্দি এলাকার মাটি মুন্সিগঞ্জের একটি ব্রিকফিল্ডে বিক্রি করে যাচ্ছেন স্থানীয় কতিপয় মাটি খেকু। যার ফলে নীলকমল ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এ দুটি ওয়ার্ড। এ বালু খেকুদের হাত থেকে নীলকমল ইউনিয়নকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে বালু খেকুদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানান এলাকাবাসী। মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যান, উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি (ম্যাজিষ্ট্রেট) আব্দুল্লাহ আল মামুন। মাটি খেকুরা সহকারী কমিশনার ভুমির আসার সংবাদ পেয়ে তারা পালিয়ে যায়। তিনি চলে আসার পর এই চক্র পুনরায় মাটি কাটার প্রস্তুতি নেয়। রাতের আঁধারে মাটি কাটছে বলে সংবাদ পাওয়া যায়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাইমচর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩ টি ইউনিয়ন নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ৩টি ইউনিয়ন কাগজে কলমে থাকলেও ঐ তিনটি ইউনিয়নের বেশির ভাগই এখন নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। নীলকমল ইউনিয়নে যে টুকু জায়গা রয়েছে সেটুকুতেও কুনজর পড়েছে স্থানীয় কতিপয় মাটি খেকু সদস্যদের। দিনে দুপুরে ৪টি বেকু দিয়ে কয়েকটি জাহাজে করে প্রতিদিনই বিক্রি করছে মাটি। যার ফলে মানচিত্র থেকে বিলীনের পথে রয়েছে নীলকমল ইউনিয়ন। অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষনাকৃত এ মধ্যচরের মাটি কেটে মানচিত্র থেকে মুছেপেলার মত জগন্নতম কাজ করছে এ মাটি খেকু চক্রটি। এ মাটি কাটার সাথে জড়িত স্থানীয় ফারুক মোল্লা ও রনি বেপারীসহ আরো কয়েকজন।
৯নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বাচ্ছু সরকার জানান, আমার পাশের ওয়ার্ডের মাঝি কান্দি গ্রামের মাটি অন্যত্র বিক্রি করার কারণে গ্রামটি বিলুপ্তির পথে। যা অত্যান্ত দুঃখজনক বিষয়। কে বা কারা এ মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে মুন্সিগঞ্জে বিক্রি করছে এটা সকলেরই জানা। তবে গ্রামটি রক্ষার স্বার্থে এ মাটি কাটা বন্ধ করা প্রয়োজন।
৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রতন জানান, আমার ওয়ার্ডে মাটি কাটার সংবাদ পেয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি স্যার এবং বায়ারচর ফাঁড়ি থানাকে অবহিত করেছি। আজ এসিল্যান্ড এসে দৌড়িয়ে দিয়েছে। স্যার আসার সংবাদ পেয়ে সব কিছু নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
নীলকমল ইউপি চেয়ারম্যান সউদ আল নাসের বলেন, এ ইউনিয়নের কিছু লোক তাদের জমির মাটি বিক্রি করেছে। কেউ যদি তার জমির মাটি বিক্রি করে আমরা কি করতে পারি। চরাঞ্চলের ফসলি মাটি বিক্রি করা কি বৈধ নাকি অবৈধ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এটা অবৈধ। তাই আমি তাদেরকে মাটি কাটতে নিষেধ করেছি। কারা মাটি কাটে এ বিষয়ে নাম বলতে চাননি তিনি।
অভিযুক্ত ফারুক মোল্লা বলেন, আমরা ৪/৫ দিন মাটি কেটেছি। আজ এসিল্যান্ড এসে নিষেধ করেছেন। তাই আমরা আর মাটি কাটবো না।
এদিকে ঝিল বানানোর নাম করে ইব্রাহিমপুর চরের মাটি কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক,নৌ পুলিশ সুপার,কোস্টগার্ড সমন্বয়ে যৌথ অভিযান করা দরকার বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন।