বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে দেশের কারখানা গুলোর উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। কোনো কোনো কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য শিল্প মালিকদের কাজ না করে শ্রমিকদের বেতন দিতে হচ্ছে। আর খন্ডকালীন শ্রমিকদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, উৎপাদন না করেও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষকে প্রতি মাসে নুন্যতম বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে রপ্তানির বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যেও পণ্যের দাম বাড়ছে।
কাপড় উৎপাদনের জন্য নরসিংদীতে ছোট- বড় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার বস্ত্র কল রয়েছে। এসব কারখানায় উৎপাদিত কাপড় সেকেরচর বাবুর-হাটের মাধ্যমে সারা দেশে বিক্রয় হয়। বিদ্যুৎ গ্যাস সংকটের ফলে এখন কারখানা অর্ধদিবস বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে গাজীপুরে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রপ্তানি নির্ভর গার্মেন্টস ও সিরামিকের অধিকাংশ কারখানা এখানে রয়েছে। গাজীপুরে মোট কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ১৬৫ টি। এর মধ্যে পোশাক কারখানা আছে ১ হাজার ১৮৭ টি। এ ছাড়া বেশ কিছু লাইসেন্সবিহীন ছোট ছোট কারখানা রয়েছে। এর অধিকাংশই গ্যাস নির্ভর। কিন্তু গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় গত কয়েক মাস থেকে কারখানা গুলোর উৎপাদন মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছে।
চামড়া শিল্প নগরীতে রয়েছে ১৪২ টি ট্যানারি। কিন্তু বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন কমে গেছে। রপ্তানি নির্ভর এ শিল্পে বর্তমান ৬/৭ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকছে। অন্যদিকে বন্দর নগরী নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানা সহ শিল্প কারখানা আছে ১ হাজার ৭৮৫টি। কিন্তু প্রতিদিন ৩/৪ বার লোডশেডিংয়ের কারণে ও গ্যাসের নিম্ম চাপের কারণে শুধু উৎপাদন ব্যবহৃত হচ্ছে না, অনেক কারখানা বন্ধও রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের ভালুকায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩৫০ কারখানা রয়েছে। এলাকায় দিনে ৮/৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় উৎপাদন ৩০/৪০ শতাংশ কমে গেছে।
অনেক কারখানা মালিক উৎপাদন অব্যাহত রাখতে জ্বালানি তেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চেষ্টা করলেও বাড়তি খরচের কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যা নিয়মিত ভাবে নির্বাহ করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সংকট খনি-ভুত হচ্ছে। তবে সিত্রাং ঘূর্ণি ঝড়ের পর বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও চলমান সংকট থেকে বের হওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারা বিশে^ই জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। সাথে ডলারের বিপরীত মূল্যস্ফীতি হওয়ায় সংকট আরো বেশি ঘনীভূত হয়েছে। কাজেই চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ডলার সংকটের এ সময় যদি রপ্তানি বাণিজ্য না বাড়ানো যায় তবে সংকট যে আরো ভয়াবহ রূপ নেবে তা না বললেও খুব সহজেই অনুমেয়। তাই ভর্তুকি দিয়ে হলেও শিল্প কারখানা গুলোকে পূর্ণ উৎপাদনে রাখা জরুরি। আর তা করতে প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন ভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।