আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পরেও হচ্ছে না গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা যুব লীগের সম্মেলন। যার ফলে আগামী সম্মেলনে পদ প্রত্যাশীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত সম্মেলন না হলে এসব পদ প্রত্যাশী নেতৃবৃন্দ আন্দোলনে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
জানাগেছে, ২০০৭ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মতিয়ার রহমান হাজরাকে আহ্বায়ক করে যুবলীগের ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
এই আহ্বায়ক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, জাহিদুল ইসলাম, আতিকুজ্জামান খান বাদল, রুহুল আমিন খান, মিরাজ হোসেন, সুমন হোসেন বাচ্চু, নুরুল হোসেন নয়ন, ফরমান মুন্সী, মলয় কান্তি বল্লভ, মাসুদ রানা ও দিদারুল ইসলাম।
৩মাসের জন্য গঠিত এই আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই কমিটির অধিকাংশ নেতাই উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির বিভিন্ন পদে স্থান করে নিয়েছেন। এসব নেতারা যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের দুটি পদ দখল করে আছেন।
অপরদিকে সাবেক অনেক ছাত্রনেতাই কোন পদ না থাকায় সাধারণ কর্মীর মতো দলীয় কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করছেন। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় এ উপজেলায় নতুন নেতৃত্ব তৈরী হচ্ছে না বলে এ সকল সাবেক ছাত্রনেতারা মনে করছেন। এসব ছাত্রনেতারা দ্রুতই এ উপজেলায় সম্মেলন করার দাবি জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে ধন্না দিচ্ছেন। অনেকে আবার সম্মেলন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাবুল হাজরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। বিগত ৭বছর ধরে কোন পদে নেই। এই ৭ বছর সাধারণ কর্মীর মতো দলীয় কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করেছি। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে এখানে সম্মেলন হচ্ছে না। এখানে সম্মেলন করার জন্য আমাদের প্রিয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার নির্দেশ দিয়েছেন। তার পরেও এখানে রহস্যজনক কারণে সম্মেলন হচ্ছে না। সম্মেলন না হলে নতুন নেতৃত্ব¡ তৈরী হবে না বলে আমি মনে করছি। তাই দ্রুত সম্মেলন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। যদি দ্রুত সম্মেলন না হয় তাহলে আমাদের সম্মেলনের দাবিতে বিকল্প চিন্তা করতে হবে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফজলুর রহমান দিপু বলেন, ১৯৯৭ সালে কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস ছিলাম। আমি তখন যাদের সাথে ছাত্রলীগ করেছি তাদের মধ্যে অনেকেই এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে রয়েছেন। আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে পদ-পদবীহীন ভাবে দলীয় কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করছি। আমার মতো অনেক ছাত্র নেতাই যুবলীগের সম্মেলন না হওয়ার কারণে ভাসমান অবস্থায় রয়েছেন। কোটালীপাড়া উপজেলায় এই সংগঠনটি এখন মৃত্যু প্রায়। আমি এ উপজেলায় দ্রুত সম্মেলন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি শেখ কাইয়ুম বলেন, উপজেলা যুবলীগের ১১সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির মতিয়ার রহমান হাজরা, জাহিদুল ইসলাম, রুহুল আমিন খান, আতিকুজ্জামান খান বাদল, সুমন হোসেন বাচ্চু, ফরমান মুন্সী, দিদারুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির বিভিন্ন পদে রয়েছেন। এসব নেতাদের আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে পদ রয়েছে। পক্ষান্তরে অনেক ছাত্র নেতাই পদহীন অবস্থায় রয়েছেন। এখানে যুবলীগের সম্মেলন হলে কোন সাবেক ছাত্র নেতাই পদহীন অবস্থায় থাকবে না। তাই এখানে সম্মেলনটি খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মতিয়ার রহমান হাজরার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলায় যুবলীগের সম্মেলন করার জন্য আমরা জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করছি। আশা করি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এখানে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ বলেন, সাবেক ছাত্রলীগের অনেক নেতাই যুবলীগের সম্মেলন না হওয়ার কারণে পদ-পদবীহীন অবস্থায় রয়েছে। এসব ছাত্র নেতারা যুবলীগের সম্মেলনের জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমি সম্মেলন করার জন্য আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের নির্দেশ দিয়েছি। তারা দ্রুত সম্মেলনের আয়োজন করবেন বলে আমাকে আশ^াস দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা বলেন, আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ ছিল ৯০দিন। কার্যত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের এই আহ্বায়ক কমিটি এখন আর নেই। অপরদিকে অনেক নেতাই যুবলীগ করবেন না মর্মে লিখিত দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদ নিয়েছেন। সব মিলিয়ে এখানে এই সংগঠনটি এখন বিলুপ্ত। তাই জরুরী ভিত্তিতে সম্মেলন করা প্রয়োজন।