ই- জিপির (ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) মাধ্যমে দরপত্র আহবান করে সরকারী কেনাকাটা করার নিয়ম থাকলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মশা মারার ঔষুধ কিনতে তা পালন করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে পছন্দের ঠিকাদারের কাছ থেকে মশা মারার ওষুধ কেনা হচ্ছে আর তা একবার দু’বার নয়, বার বার করা হচ্ছে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অরভিন সাকিবের প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেঙ্গল মার্ক ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি ও সেপ্টেম্বরের দু’দফায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৬ হাজার ৩৫০ লিটার মশা মারার ওষুধ কিনেছে। এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে কেনা হয়েছিল ৬ হাজার ৪০০ লিটার ঔষধ। এসব ওষুধ কেনার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৭৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
পছন্দের ঠিকাদারের কাছ থেকে ওষুধ কেনার জন্য গন-খাতের ক্রয় বিধির ৭৬ (ট) ধারা (পিপিআর) ব্যবহার করা হয়েছে। এধারায় অতি জরুরি বা প্রয়োজনীয় পণ্য, কার্য এবং সেবা ক্রয়ের কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিটি ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকার বেশি কেনাকাটা করা যাবে না উল্লেখ থাকায় মশা মারার ওষুধ কেনার ব্যয় পাঁচ লাখ টাকার ওপরে না দেখানোর জন্য কয়েকটি লটে ভাগ করে কেনা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে অরভিন সাকিবের প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেঙ্গল মার্ক ইন্টারন্যাশনাল থেকে ১৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকার ২ হাজার ৯০০ লিটার ওষুধ চার লটে কেনা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। প্রতি লটে ৭২৫ লিটার করে ওষুধ সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতি লিটারের দাম ধরা হয়েছে ৬৭৮ টাকা। ফলে ৭২৫ লিটার ঔষধের দাম আসে ৪ লাখ ৯১ হাজার ৯১২ টাকা। একই পদ্ধতিতেই আগের ওষুধ কেনা হয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিয়ে ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে নিরীক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়া ওষুধ কেনা আর্থিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী। পিপিআরের এ ধারা ব্যবহার করে কেনাকাটা বা কার্যাদেশ না দিতে বিভিন্ন সময়ে লিখিত নির্দেশনা দিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিন্তু পরিচ্ছন্ন বিভাগ সেসব নির্দেশনা না মেনে দরপত্র ছাড়াই ওষুধ কিনছেন।আইনের ফাঁক ফোকর বের করে পছন্দের লোকজনকে বারবার ওষুধ সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়া আইনের পরিপন্থী। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কাজটি চলছে বাধাহীন ভাবে।
দরপত্র আহবানের মাধ্যমে কেনাকাটা হলে দাম যেমন সাশ্রয়ী হয়, তেমনি উৎকৃষ্ট পণ্য পাওয়া যায়। আইন থাকলেও তা যথাযথ ভাবে পালন না করাও অপরাধ। কাজেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মশা মারা ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে যা ঘটছে, তা তদন্ত হওয়া উচিত এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনা উচিৎ। এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও সংশ্লিষ্টদের তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। তা না হলে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে সজন প্রীতির এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।