রাজধানীসহ সারা দেশে এডিস মশার প্রজনন ও বিস্তার বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিচ্ছে ডেঙ্গু। নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় রোগটির বিস্তার বাড়ছে। এরই মধ্যে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। গত বছর মারা যায় ১০৫ জন। আর চলতি বছরের শুরু থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত মারা যাওয়া ১২০ জন ডেঙ্গু রোগীর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছর মোট মৃত্যুর ৩৫ শতাংশ শিশু। এর মধ্যে এক থেকে চার বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুর হার ৬ শতাংশ। পাঁচ থেকে ৯ বছরের শিশুর মৃত্যুহার ১০ শতাংশ। ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সী ১৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ১৯ থেকে ২৯ বছরের রোগীদের। এসব রোগীর মৃত্যুর হার ২৮ শতাংশ। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ২০ জন ঢাকা উত্তর সিটির বাসিন্দা। ১৭ জন ঢাকা দক্ষিণ সিটির বাসিন্দা। বাকি ৮৩ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৮ জন কক্সবাজার জেলার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর কোনো কোনো ধরন আছে, যা দ্বারা প্রথমবার আক্রান্ত হলেই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাঁদের মতে, এবার টাইপণ্ডথ্রি দ্বারা মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বেশির ভাগ শিশুর শক সিনড্রোম হচ্ছে। ফুসফুসে প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কোনোভাবে প্রেসার ওঠানো যাচ্ছে না। ডেঙ্গু রোগীদের পেট ও ফুসফুসে পানি আসছে। অনেকের প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, বমি হচ্ছে। বেশির ভাগ রোগী দেরি করে হাসপাতালে আসায় শকে চলে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধির কারণ। ডেঙ্গু এখন ঢাকার বাইরে স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হচ্ছে। তাঁদের মতে, ডেঙ্গু বিস্তারের প্রথম কারণ গত ২২ বছরে ঢাকায় রোগটি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা। বাস-ট্রাক, ট্রেন-লঞ্চ ইত্যাদির মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ অনেক বেশি, ফলে ঢাকা থেকে মশা বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে। কোনো দেশে বা শহরে যখন মশাবাহিত রোগ এপিডেমিক হয় তখন হটস্পট ধরে ক্রাশ প্রগ্রাম করতে হয়। সে ক্ষেত্রে হটস্পট এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ফগিং এবং লার্ভিসাইডিং মেশিন নিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। একেকটি এলাকা ধরে দুই-তিন দিন অভিযান পরিচালনা করে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলা যায়, তাহলে সেখানে ডেঙ্গু রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা কমে যায়। এপিডেমিক অবস্থায় রোগীর সঙ্গে বাহকের সংযোগটি ভেঙে দিতে হয়। আর এই কাজটি করার একটি উপায় হচ্ছে মশা নিয়ন্ত্রণ। প্রতিদিন মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ছোট-বড় ক্লিনিক ও বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে অসংখ্য মানুষ। সারা দেশেই কমবেশি ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। এ অবস্থায় ডেঙ্গুকে অবহেলা না করে আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। একটু সচেতন হলে ডেঙ্গুসহ অনেক রোগই প্রতিরোধ করা সম্ভব। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। মশক নিধন অভিযান চালানোও জরুরি। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব।