বখাটের ছুরিকাঘাতে আহত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার সেই শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মানসিকভাবেও সে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘটনার তিনদিনেও পুলিশ মামলা না নেওয়ায় ওই শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা আতঙ্কে আছেন। উপায়ন্তু না দেখে শিক্ষার্থীর বাবা বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ছুরিকাঘাতে আহত ওই শিক্ষার্থী উপজেলার মোগড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। অভিযুক্ত বখাটে নয়াদিল এলাকার শামীম মিয়া (২০)। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে শিক্ষার্থীকে গত মঙ্গলবার ছুরিকাঘাত করা হয় বলে আখাউড়া থানায় দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
আহত ছাত্রীর পরিবার ও থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাস ধরে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে ওই শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল শামীম। ওই শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিসহ প্রেমের প্রস্তাব দেয় সে। মঙ্গলবার বাড়ি ফেরার পথে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের অনতিদূরে শামীম আরেক যুবককে সঙ্গে নিয়ে ওই শিক্ষার্থীর পথরোধ করে। একপর্যায়ে ছুরি দিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাম হাতের কনুইয়ের নিচে আঘাত করে শামীম। ওই শিক্ষার্থী চিৎকার শুরু করলে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা এগিয়ে এসে ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। ঘটনার পরপর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শশাঙ্ক রায় চৌধুরী ঘটনা সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) লিখিতভাবে অবহিত করে। শিক্ষার্থীর বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। তবে ঘটনার তদন্ত করা হবে উল্লেখ করে মামলা নথিভুক্ত করতে টালবাহানা শুরু করে পুলিশ। ঘটনা ঠিক নয় বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এ অবস্থায় ওই শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকরা বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপারের কাছে এসে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শশাঙ্ক রায় চৌধুরী জানান, ওই শিক্ষার্থী কান্না করে শামীমের বিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত করাসহ ছুরিকাঘাতের অভিযোগ করেন। ঘটনার পর থেকে ওই শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসছে না। তবে ঘটনার সত্য মিথ্যা তো জানা নেই।
আহত ওই শিক্ষার্থী জানায়, এক মাস ধরে শামীম তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো। মঙ্গলবার দুপুরে বাড়ির ফেরার সময় মোটরসাইকেলে এসে সে পথরোধ করে। শামীম ছুরি দিয়ে তিনবার আঘাতের চেষ্টা করে। তবে সরে যাওয়ায় রক্তাক্ত হয়নি সে।
ওই শিক্ষার্থীর বাবা জানায়, ঘটনার পর থেকে তার মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অপমানে বিদ্যালয়েও যাচ্ছে না। এমনকি আত্মহত্যারও চেষ্টা করে। থানা পুলিশ মামলা না নেওয়ায় পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুল ইসলাম প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে জানান, আলপিন কিংবা সুচ বা গাছের কাটা দিয়ে ওই শিক্ষার্থী নিজেই নিজের হাতে আঁচড় দিয়েছে। অভিযোগ উঠা তরুণকে পছন্দ করে ওই শিক্ষার্থী। কিন্তু এতে সাড়া না পেয়ে সে নিজেই এ কান্ড ঘটায়। এ ছাড়া ঘটনার সময়ে ওই তরুণ বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সিলেটে ছিলো।