পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর স্বাভাবিক কারনেই বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে যানবাহনের চাঁপ অনেকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ থেকেই সেতু চালুর পূর্বের চেয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রিপ বেড়েছে। এরসাথে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু নতুন কোম্পানীর বাস।
সবমিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের এই একমাত্র প্রবেশ পথটিতে এখন যানবাহনের আধিক্য চরমে। এসব যানবাহন নিয়েই শুরু হয়েছে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও অরাজক পরিস্থিতি। একদিকে বাস পার্কিংয়ের জায়গার সীমাবদ্ধতা অন্যদিকে নিয়ম বর্হির্ভূতভাবে মূল সড়কে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে যাত্রী ওঠানামা করানো। সবমিলিয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ন এই প্রবেশ পথটিতে যানজট লেগেই রয়েছে। এক কথায় নগরীর গুরুত্বপূর্ন ও ব্যস্ততম এই স্ট্যান্ডটিতে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা।
বরিশাল ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোন পরিবহন যাত্রী বহন করতে পারবে না। বিষয়টি নিয়ে তারা একাধিকবার বাস মালিক ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছেন এবং অনেক গাড়িকে মামলাও দিয়েছেন। এরপরেও অনেক পরিবহন এ নিয়ম ভঙ্গ করছেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। অপরদিকে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা এমন অবস্থার জন্য ট্রাফিক বিভাগকে দায়ী করে বলেন, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বহীনতার কারণে এ রকম পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।
শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালু হবার পর শুধু নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন শতাধিক বাসের ট্রিপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সাথে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য জেলা ও উপজেলা থেকে ছেড়ে আসা কয়েকশ’ বাস। এসব বাসের মধ্যে বেশীর ভাগই কিছু সময়ের জন্য হলেও নথুল্লাবাদ টার্মিনালের সামনে যাত্রা বিরতি করে। এ বিরতির সময় পাঁচ মিনিট থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর এ সময়ের মধ্যেই বাসে যাত্রী ওঠা-নামা করে থাকেন। এ ছাড়া টার্মিনাল থেকে যেসব বাস তথা পরিবহন ছেড়ে যাবার জন্য বের হয় তারাও সড়কে অবস্থান করে যাত্রী বহন করছে। এতে করে টার্মিনালে দিন রাত যানজট লেগেই রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নামিদামী কয়েকটি পরিবহন ব্যতিত অধিকাংশ পরিবহনই যাত্রী নিয়ে টার্মিনাল ছাড়ার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও সড়কে অবস্থান করে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করে থাকে। অভিযোগ রয়েছে শ্রমিক সংগঠন ও ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করেছে পরিবহনগুলো।
এ ব্যাপারে নথুল্লাবাদ বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন বলেন, আমরা কোন অনিয়মের সাথে জড়িত নই। আমরা এ কাজের সমর্থন করিনা। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের কিন্তু তারা বিষয়টি ভালোভাবে দেখভাল করছেন না। তিনি আরও বলেন, বাস এবং ট্রিপের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কিন্তু জায়গাতো আর বৃদ্ধি পায়নি। তাই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
নগর ট্রাফিকের পরিদর্শক আবদুর রহিম বলেন, টার্মিনাল থেকে বাস ছেড়ে রাস্তায় এক মিনিট দাঁড়ানোর নিয়ম নেই। ট্রাফিকের ১০ থেকে ১২ জন সদস্য প্রতিনিয়ত স্ট্যান্ডে দায়িত্বপালন করছেন। যারা নিয়ম মানছে না তাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত মামলা করছি। তারপরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে থাকছে না। তিনি আরও বলেন, চালকরা নিয়ম না মানার পাশাপাশি সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে স্থান সংকট। নথুল্লাবাদ টার্মিনাল থেকে গাড়ি প্রবেশ ও বের হবার জন্য একটি মাত্র পথ। যে কারণে সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। তবে তার দাবী কোন পরিবহন নয়, লোকাল কিছু বাস রাস্তায় যাত্রী বহন করে থাকে।
মহানগর ট্রাফিক বিভাগের উপণ্ডপুলিশ কমিশনার মোঃ তানভীর আরাফাত বলেন, নথুল্লাবাদের দিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। বাস রাস্তায় দাঁড় করিয়ে যাত্রী বহনের সুযোগ নেই। তারপরেও যাত্রীদের স্বার্থে দুই এক মিনিট সুযোগ দেই। কিন্তু সেই সুযোগটি যদি তারা বেশী সময়ের জন্য নিয়ে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, আশা করছি খুব কম সময়ের মধ্যে টার্মিনালটি কাশিপুর স্থানান্তরিত হলে আর কোন সমস্যা থাকবে না।