বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে দেশের অর্থনীতি বেশ কিছুদিন ধরেই চাপের মুখে রয়েছে। সম্প্রতি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর দেশের রিজার্ভ আবারও ধাক্কা খেল বলে জানা যাচ্ছে। আকু হলো এমন একটি ব্যবস্থা- যার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো আঞ্চলিক লেনদেনের জন্য আমদানি পেমেন্ট নিষ্পত্তি করে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার সদস্য। এই ব্যবস্থায় দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করতে হয়। তথ্য মতে, রোববার রিজার্ভ ছিল ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। এরপর ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার আকু’র বিল পরিশোধে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বলা দরকার, রিজার্ভে ধাক্কা, অন্যদিকে অর্থনৈতিক চাপণ্ড ফলে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টি আমলে নেওয়া দরকার, রপ্তানি আয় বাড়লেও অস্বাভাবিকভাবে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) কমে যাওয়ায় ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়, রিজার্ভে যার প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের মজুত চাপে আছে বলেও জানান তারা। আমরা মনে করি, যে পণ্য আমদানি অপরিহার্য শুধু সেসব পণ্য আমদানি, রেমিট্যান্স বাড়াতে সুস্পষ্ট ও সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, রপ্তানি বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ অব্যাহত রাখা জরুরি। প্রসঙ্গত, এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইএমএফের বৈঠকে রিজার্ভের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। জানা গেছে, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) সরবরাহ করা ৭ বিলিয়ন ও শ্রীলংকাকে দেওয়া ২০ কোটি ডলার রিজার্ভে দেখানো হচ্ছে। এ ছাড়া গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) ২০ কোটি, লং টার্ম ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ) তহবিলে তিন কোটি ৮৫ লাখ, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানকে চার কোটি ৮০ লাখ এবং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) আমানত রিজার্ভে দেখানো হয়। কিন্তু ঋণ দেওয়া এসব অর্থ রিজার্ভে অন্তর্ভুক্ত করতে নারাজ আইএমএফ। লক্ষণীয়, গত বছরের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। আগস্টে ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। এই রিজার্ভ কমতে কমতে এখন ৩৪ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, রিজার্ভের ক্ষেত্রে আইএমএফের দেওয়া শর্তে হিসাব করলে যা কমে দাঁড়াবে ২৬ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলারে। যখন রোববার রিজার্ভ ছিল ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার আর আকু’র বিল পরিশোধে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার- তখন এটি আমলে নিতে হবে। উল্লেখ্য, গত বছরের শুরুতে মহামারি করোনার কারণে প্রবাসীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে তাদের জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছিলেন। অনেকে চাকরি হারিয়ে কিংবা ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ করে সব অর্থ দেশে এনেছেন। এ ছাড়া গত বছরের শুরুতে করোনার স্থবিরতায় হুন্ডি প্রবণতাও কমে যায়। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। এসব কারণে দেখা যায়, মহামারির মধ্যেও রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েছিল। অথচ এখন অনেকে দেশে এসে আটকা পড়েছেন। আবার অনেক প্রবাসী নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া হুন্ডিও বেড়েছে। ফলে প্রবাসী আয় নিম্নমুখী রয়েছে। অন্যদিকে, এমন বিষয় আলোচনায় আসছে যে, বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রিজার্ভ কমে যাওয়াটা অর্থনীতির জন্য ভালো খবর না। এমন আলোচনায়ও আসছে যে, বাংলাদেশ এখন বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ রুখতে হলে রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, রিজার্ভে ধাক্কা এবং চাপে অর্থনীতি- এটি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে হবে।